ময়মনসিংহের ভালুকায় থাকা ও খাওয়ার খোঁটা দেওয়ার ক্ষোভে নজরুল ইসলাম, দুই শিশু সন্তানসহ গলা কেটে হত্যা করেছেন ভাবিকে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বুধবার (১৬ জুলাই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, চাহিদা মতো খাবার না দেওয়া, অবহেলা ও মারধর করায় আক্রোশ থেকে নজরুল ভাবি ও দুই ভাতিজা-ভাতিজির প্রাণ নেয়।
ভালুকা মডেল থানার ওসি মো. হুমায়ন কবীর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাত ৯টার দিকে জানান, লোমহর্ষক ও বিভৎস এই ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে নেই বিরাট কোনো কারণ। ঘাতক দেবরের অসুস্থ জেদ এই ট্রিপল মার্ডারের মূল কারণ। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি এসব তথ্য জানিয়েছেন। আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ডের পর সংশ্লিষ্ট মামলায় কারাগারে পাঠানো হবে তাকে।
তিনি আরো জানান, জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দুই বছর কারাগারে ছিলেন আসামি নজরুল ইসলাম। এরপর তার বড় ভাই রফিকুল ইসলাম একটি সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে গত দুই মাস ধরে নিজের ভাড়া বাসায় একসঙ্গে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বিনা খরচে ভাইয়ের বাসায় দেবর নজরুলের বসবাস নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ ছিল ভাবি ময়না আক্তার। এ কারণে থাকা-খাওয়ার খোঁটা দিতেন ভাবি। এতে ক্ষুব্ধ দেবর বঁটি দিয়ে গত ১৪ জুলাই ভোররাতে ভাবি ও তার দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে বিছানায় ফেলে রেখে ঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ১৪ জুলাই সকালে ঘরের তালা ভেঙে তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের পর দেশজুড়ে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রাতে নিহত ময়না আক্তারের বড় ভাই মো. জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভালুকা থানায় হত্যা মামলা করেন। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে ওই মামলায় অভিযান চালিয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকারী নজরুল ইসলামকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসামি নজরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকায়। এলাকাবাসী জানিয়েছে, তার বাবা সলতু মিয়া মানসিক বিকারগ্রস্ত । তার মা দুই ছেলে ছোট থাকা অবস্থায় মুন্সীগঞ্জে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর কেন্দুয়া উপজেলার তেলিগাতি এলাকার ফুফু রাসু বেগমের বাসায় বড় হয় সলতু মিয়ার দুই ছেলে রফিকুল ও নজরুল। সেখানে থেকে কৈশোর বয়সে মানুষের বাসায় কাজ করত নজরুল। কিন্তু নানা কারণে বকাঝকা করার কারণে সেখান থেকে এক সময় পালিয়ে গিয়ে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভবঘুরের মতো বসবাস করে এক সময় নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নজরুল। এ কারণে কয়েক বছর আগে খুলনা থেকে ঢাকায় এসে জয়দেবপুর থানার একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে বন্দি হয় নজরুল ।
বিষয়টি জানতে পেরে ভ্রাতৃত্বের ভালোবাসায় গত দুই মাস আগে ছোট ভাই নজরুলকে জেল থেকে ছাড়িতে এনে বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ভালুকায় নিজের বাসায় রেখেছিল। সেখানে সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে রিকশা চালাতো। এরই মাঝে ভাবির খোঁটায় ক্ষুব্ধ নজরুল শিশু নিরব (২), রাইসা মনি (৭) এবং ভাবি ময়না আক্তারকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান।
মঙ্গলবার বাদ এশা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাবর গ্রামে নানা মৃত আতাব উদ্দিনের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাদের।
Leave a comment