মা-বাবার সঙ্গে ছুটির দিনে ঘুরতে বের হয়েছিলেন দুই বোন নীলা-নীহা। কিন্তু আনন্দ যেন মুহূর্তেই বিষাদে রূপ নিয়েছে। মর্মান্তিক এক নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বোন। একসঙ্গে দুই মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন মা-বাবা।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে ফারিয়া রহমান নীহার মরদেহটি ভেসে উঠলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তা উদ্ধার করে। এর আগে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলেই বড় বোন কাশ্মীরা রহমান নীলার (১৭) মরদেহ উদ্ধার করেন ।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরটেকী এলাকার ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র নদে শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার জালুয়াপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের মেয়ে কাশ্মির রহমান নীলা (১৭) ও তার ছোট বোন ফারিয়া রহমান নীহা (৯)। নীলা কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের এবং নীহা কটিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের বাবা আবদুর রহমান পাকুন্দিয়ার পুলেরঘাট বাজারে ব্যবসা করেন এবং পরিবার নিয়ে কটিয়াদীতে বসবাস করেন।
জানা গেছে, শুক্রবার (১১জুলাই) বিকেলে মা-বাবার সঙ্গে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকী ব্রহ্মপুত্র নদের দৃষ্টিনন্দন বেড়িবাঁধে ঘুরতে এসেছিলেন তারা দুই বোন। বেড়িবাঁধে ঘুরাঘুরির একপর্যায়ে সবাই একটি ছোট নৌকায় উঠেন। হঠাৎ নৌকাটি ডুবে গেলে তারা সবাই পানিতে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে মা-বাবা ও বড় মেয়েকে উদ্ধার করলেওছোট মেয়ে নীহা নিখোঁজ হন । উদ্ধার হওয়া তিনজনকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুবি দল ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজ চালালেও সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া শিশুকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরদিন শনিবার (১২ জুলাই) সকালে ফের অভিযানে নামে ডুবুবি দল। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ দক্ষিণে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নীহার মরদেহ।
ঘুরতে এসে দুই মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন তাদের বাবা-মা। তাদের আহাজারি আর কান্নায় পুরো হাসপাতাল ভারী হয়ে উঠে ।
ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের দাবি, ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই দক্ষিণ চরটেকীর বেড়িবাঁধটি যেন সঠিকভাবে নজরদারি করে প্রশাসন। কেননা স্থানীয় অনেক অসচেতন ব্যক্তি আর্থিক সুবিধার জন্য ছোট নৌকায় যাত্রী তুলে ব্যবসা করছেন। সেখানে আবার স্পীডবোটও চলছে। এতে যারা এখানে ভ্রমণ করতে আসছেন তারা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
পাকুন্দিয়ার ইউএনও মো.বিল্লাল হোসেন বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়াসহ অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার কারণে সাময়িকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বেড়িবাঁধ এলাকায়। আপাতত বন্ধ থাকবে সব ধরনের নৌযান চলাচল। নৌকাডুবিতে দুই বোনের মৃত্যুতে উপজেলা প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত।
Leave a comment