চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে শুরুতেই বড় অঙ্কের ঋণের চাপ বহন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ পূর্বাভাস দিয়েছে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতিতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঋণের মধ্যে দেশি ঋণ থাকবে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ১০ লাখ ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আগামী দুই অর্থবছরে এ ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে তা হবে ২৬ লাখ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছর শেষে প্রায় ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত সহনীয় সীমার মধ্যে থাকলেও অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, এ হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই অনুপাত ছিল ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা পরের বছর মূল বাজেটে বেড়ে হয় ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে ৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। মধ্যমেয়াদি প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা দাঁড়াবে ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশে।
সরকারি হিসাব বলছে, গত অর্থবছরে দেশের মোট ঋণ ছিল ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাজেট প্রাক্কলনে এটি ২২ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধরা হলেও সংশোধিত হিসাবে তা কমিয়ে ২১ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় আনা হয়েছে।
এ অবস্থায় রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না পৌঁছানোয় ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধ নিয়ে চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে অর্থ বিভাগ। বর্তমানে রাজস্ব-জিডিপির হার আট শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় খুবই কম। তার ওপর ২০২৬ সালের শেষে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। সুদের হার বাড়বে এবং পরিশোধের সময় কমে আসবে।
বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধেও বড় অঙ্কের ব্যয় হবে আগামী বছরগুলোতে। অর্থ বিভাগের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ হয়েছে ২০২ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২৫-২৬ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ২৯০ কোটি ডলারে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা ৩৩৪ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।
এদিকে সদ্য প্রকাশিত সরকারে মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র বলছে, পরিমাণে বেশি হওয়ায় দেশের ঋণ পরিস্থিতি নিম্ন থেকে প্রায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্তরে পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি অনুপাত ১৪০ শতাংশে পৌঁছানোয় অর্থ বিভাগ উদ্বিগ্ন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, অতীত সরকারের রেখে যাওয়া সংকটময় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার এবং গ্রহণে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। তবে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঋণ-জিডিপির অনুপাত বর্তমানে যে অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, কর-জিডিপির অনুপাতের দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে দক্ষ ঋণ দর-কষাকষি এবং সুষম ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার এখনই উপযুক্ত সময়।
সূত্র সিপিডি
Leave a comment