Home NCP ১ জুলাই : আওয়ামী লীগের পতনের অভূতপূর্ব সূচনা হয়েছিল
NCPআওয়ামী লীগজাতীয়রাজনীতি

১ জুলাই : আওয়ামী লীগের পতনের অভূতপূর্ব সূচনা হয়েছিল

Share
Share

গত বছরের ১ জুলাই এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ রূপ নেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’। প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনা হয়েছিল ।

মানুষ কল্পনাও করেনি যে চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত রূপ নেবে ‘জুলাই বিদ্রোহে’, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

ছাত্রদের এই অসন্তোষের সূচনা ঘটে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার রায়ের পর।

সরকার ২০১৮ সালে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়।ছাত্ররা এই ব্যবস্থাকে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য হিসেবে মনে করে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।

সরকার প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে চাইলে পরিস্থিতি বিদ্রোহে রূপ নেয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা একযোগে আক্রমণ চালালে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত এবং প্রায় ২০,০০০ জন আহত হয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই জুলাই বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

২০২৪ সালের ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে।

আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ‘জুলাই : মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে লিখেছেন, ‘৫ জুন বিকেলে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুলে স্কুটি মেরামত করাচ্ছিলাম। তখন ফেসবুকে দেখি- হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে। মনে হলো ২০১৮ সালের অর্জনগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচির সূচনা হয়।

রাত সাড়ে ৭টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একটি মিছিল বের হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়। এই সমাবেশে তারা হাইকোর্টের রায়কে ‘মেধাবীদের সঙ্গে তামাশা’ বলে প্রত্যাখ্যান করে।

সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম পরদিন ৬ জুন বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ঘোষণা দেন।

প্রায় পাঁচ থেকে ছয়শ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই মিছিলে অংশ নেয় এবং স্লোগান দেয়- ‘কোটা পদ্ধতি মানি না’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না’, ‘কোটা বাতিল করতেই হবে’।

আসিফের বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে নাহিদও ৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাদের প্রথম বৈঠকের কথা এবং কীভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন তা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার ছুটির আগে মাত্র তিন দিন আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছিলাম।’

৬ জুন ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথসহ দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে।

৯ জুন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। শুনানির দিন ধার্য হয় ৪ জুলাই।

১০ জুন আবারও মিছিল হয় এবং শিক্ষার্থীরা সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল করতে আল্টিমেটাম দেয়, না হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়।

আসিফ স্মরণ করেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছিল, তাই আমরা সেই দিনটিকে আল্টিমেটামের সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করি। আমরা সরকারকে সতর্কও করেছিলাম- যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে আমরা আবার আন্দোলন শুরু করব।’

৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা শেষ হয় রাজু ভাস্কর্যে ।

সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষার বর্জন চলবে।

নাহিদ ইসলাম তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন- ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হবে।

নাহিদ ইসলাম সমাবেশে ঘোষণা দেন- দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে।

সেই সঙ্গে তিনি উত্থাপন করেন চারটি দাবি –
১. দ্রুত কোটা সংস্কারে কমিশন গঠন, যেন উপকৃত হয় পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী ।
২. নিয়োগে একাধিকবার কোটা সুবিধা ব্যবহার বন্ধ করা।
৩. কোটা পূরণ না হলে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৪. প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হুতি

ইসরায়েলকে  লক্ষ্য করে ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধারা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে । ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে এ নিয়ে দেশজুড়ে সতর্কতা জারি...

ফেনীতে একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৩ ডেঙ্গু রোগী

গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তারা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর আগে জুন মাসে দুইজনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হন।...

Related Articles

ভারতকে রুখতে হলে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সমন্বয়ক আব্দুস...

গাইবান্ধায় ভাতিজার হাতে খুন হয়েছে চাচা

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাই ও ভাতিজা ধারালো অস্ত্র দিয়ে...

নারায়ণগঞ্জে মোটরসাইকেলের জন্য বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করল ছেলে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মোটরসাইকেল কেনার জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে, হাতুড়ি দিয়ে...

বগুড়ায় উদ্ধার হয়েছে অপহৃত তিন শিক্ষার্থী

সেনাবাহিনী বগুড়ায় অপহৃত তিন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের চারজনকে...