Home জাতীয় অপরাধ পুলিশকে কামড়ে দিয়ে আদালত থেকে পালালেন খুনের আসামি
অপরাধ

পুলিশকে কামড়ে দিয়ে আদালত থেকে পালালেন খুনের আসামি

Share
Share

রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রীতিমতো এক নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী হলো। হত্যা মামলায় ছয় বছর ধরে কারাবন্দি থাকা শরীফুল ইসলাম নামে এক আসামি পুলিশ সদস্যকে কামড়ে দিয়ে চোখের সামনে থেকে পালিয়ে গেছেন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে। এই ঘটনায় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই নয়, বিস্মিত হয়েছেন আদালতে উপস্থিত আইনজীবী, মামলার পক্ষ-বিপক্ষের মানুষজনসহ সাধারণ উপস্থিতিরাও।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাইন উদ্দিন চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামি শরীফুল ইসলাম রাজধানীর খিলগাঁও থানায় করা ২০১৮ সালের একটি হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে থেকে আজ আদালতে শুনানির জন্য তাঁকে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে যখন তাঁকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল, তখন হঠাৎ করে সে পুলিশ কনস্টেবল শহীদুল ইসলামের হাতে হঠাৎ কামড় বসিয়ে দেয় এবং সেই সুযোগে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই সে আদালত চত্বরের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে জনসমুদ্রে মিশে যায়।

এই অবিশ্বাস্য ঘটনার পরপরই আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং আশপাশে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আসামিকে পুনরায় গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পালিয়ে যাওয়া আসামির পরিচয় প্রকাশ করে পুলিশ জানিয়েছে, তার নাম শরীফুল ইসলাম। তিনি দিনাজপুর জেলার হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা, পিতার নাম শফিক আহমেদ। শরীফুলের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ২০১৮ সালে দায়ের হওয়া এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল এবং তিনি সেই মামলার মূল অভিযুক্ত ছিলেন।

এ ঘটনায় পুলিশ বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিসি মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, “তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে, আসামি পালিয়ে যাওয়ার পেছনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কনস্টেবলের কোনো অবহেলা ছিল কি না। কারও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আদালতের মতো একটি উচ্চ নিরাপত্তা ঘেরা স্থানে একজন আসামির এমনভাবে পালিয়ে যাওয়া কেবল বিস্ময়ের জন্ম দেয় না, বরং এটিকে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ধরনের একটি ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, যদি একজন খুনের আসামি প্রকাশ্য আদালত প্রাঙ্গণ থেকে এমন দুঃসাহসিক কায়দায় পালিয়ে যেতে পারে, তবে দেশের অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা নিছক একজন আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নয়—এটি আমাদের বিচার প্রক্রিয়া, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সতর্কতা ও প্রস্তুতির ঘাটতির একটি বড় উদাহরণ।

আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, আদালতের অভ্যন্তরে আসামিকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব যেসব পুলিশ সদস্যদের ওপর বর্তায়, তাঁদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।

ইতোমধ্যে আদালত প্রাঙ্গণের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে শরীফুল ইসলামের পালানোর রুট, তাকে সাহায্য করার কেউ ছিল কি না, কোনো বাহ্যিক সহযোগিতা ঘটেছে কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, দিনাজপুর জেলার হরিপুরে শরীফুলের গ্রামে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তার আত্মীয়-স্বজন ও সম্ভাব্য গোপন আশ্রয়ের জায়গাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনো তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।

ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা আসামি কিভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতো পরিকল্পিতভাবে পালাতে পারে? কারাগার থেকে আদালত পর্যন্ত আসামিকে আনা এবং ফেরত নেওয়ার প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা বলয় থাকা সত্ত্বেও এমন দুর্ঘটনা পুলিশি নজরদারির ঘাটতির প্রমাণ বলেই মনে করছেন অনেকে।

এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরাও। তাঁদের মতে, বিচার ব্যবস্থায় আস্থা রক্ষার জন্য অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বন্ধ করতে হবে এবং যারা দায়িত্বে থেকেও ব্যর্থ হয়েছেন, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এমন একটি স্থান, যেখানে প্রতিদিন শত শত মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং আসামিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত নিরাপত্তা গ্রহণ করার কথা। কিন্তু এবার দেখা গেল, একজন আসামি রীতিমতো কামড় দিয়ে রক্ষা প্রহরীকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

এই ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পুনরায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার নির্দেশ আসা অস্বাভাবিক নয়। এখন দেখার বিষয়, শরীফুল ইসলামকে কবে নাগাদ পুনরায় গ্রেপ্তার করা যায় এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা।

 

সূত্র: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

করাচিতে পাঁচ তলা ভবন ধসে নিহত হয়েছে ৫ জন

পাকিস্তানের করাচিতে একটি পাঁচ তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে...

বগুড়ায় উদ্ধার হয়েছে অপহৃত তিন শিক্ষার্থী

সেনাবাহিনী বগুড়ায় অপহৃত তিন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের চারজনকে আটক করা হয়েছে। শহরের মালতিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে...

Related Articles

নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর থানায় হাজির স্বামী

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী ইমরান হোসেন স্ত্রী বিজলী আক্তার আমেনাকে...

যশোরে সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণসহ আটক হয়েছে ২ জন

যশোর সদর উপজেলার মুরাদগড় বাজার এলাকায় বিশেষ অভিযানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)...

দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন জা, হত্যাকাণ্ডে ৪ জন অংশ নেন

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ফেরদৌসী বেগম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে...

গাইবান্ধায় অস্ত্র-মাদকসহ আটক হয়েছে ৪ জন

সেনাবাহিনী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, ইয়াবা ও ল্যাপটপসহ আটক করেছে...