ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় এক মর্মান্তিক পারিবারিক কলহের জেরে বাবার ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারালেন রাহাবুল ইসলাম নামে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে, যা এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র শোক ও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
রাহাবুল ইসলাম পেশায় হোটেল কর্মচারী ছিলেন। পারিবারিকভাবে তাঁর মা শাহনাজ বর্তমানে জর্ডানে কর্মরত। ছেলে রাহাবুল এবং স্বামী জুয়েল রানা একই এলাকায় একটি হোটেলে কাজ করতেন এবং একসঙ্গে বসবাস করতেন।
ঘটনার রাতে, পারিবারিক বিষয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতা চূড়ান্ত রূপ নেয়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে জুয়েল রানা ছুরিকাঘাত করেন নিজের সন্তান রাহাবুলকে। ছুরিকাঘাতে রাহাবুল গুরুতর আহত হলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেওয়া হলেও, চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাহাবুলের মামা হুমায়ুন জানান, দীর্ঘদিন ধরে জুয়েল রানা ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল। শাহনাজ বিদেশে থাকায় সংসারের অনেক সিদ্ধান্ত ছেলে রাহাবুল নিতে শুরু করেছিলেন। এতে করে বাবা-ছেলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। সেই পারিবারিক চাপই শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী রূপ নেয়।
এ ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আলামত সংগ্রহ করে। রাহাবুলের মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “ঘটনাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। অভিযুক্ত জুয়েল রানা ঘটনার পরপরই পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। কী কারণে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটল, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এদিকে, মায়ের অনুপস্থিতিতে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। পরিবারটির প্রতি দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, চাপ এবং আর্থিক টানাপড়েনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। তাঁদের মতে, বাবা ও ছেলের সম্পর্ক সম্প্রতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
এ হত্যাকাণ্ড যেন সমাজে পারিবারিক সহনশীলতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আবারও গুরুতর প্রশ্ন তোলে। বাবা-ছেলের সম্পর্ক যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরতার জায়গা হওয়ার কথা, সেখানে সেটি পরিণত হলো এক নির্মম হত্যাকাণ্ডে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে জুয়েল রানার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে এবং তিনি তাঁর কর্মস্থলেও আর যাননি। সম্ভাব্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বা আশ্রয়ের জায়গাগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং নিহত রাহাবুলের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
কামরাঙ্গীরচরের এই নৃশংস ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, পরিবারে দীর্ঘদিনের চাপ ও দাম্পত্য বিভেদ কীভাবে সন্তানদের জীবনকে অপ্রতিরোধ্য সংকটে ঠেলে দিতে পারে। সমাজে পরিবারভিত্তিক সহিংসতার এই ধারা রোধে রাষ্ট্র ও সমাজ উভয় পক্ষের দায়িত্ব ও সংবেদনশীলতা এখন আরও বেশি জরুরি।
Leave a comment