রাজধানীর অভিজাত উত্তরায় শনিবার সকালের ব্যস্ত মুহূর্তে ঘটে গেল একটি অভাবনীয় ও ভয়াবহ ছিনতাইয়ের ঘটনা। র্যাবের পোশাক পরে আসা দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্য রাস্তায় একটি মোবাইল আর্থিক সেবা সংস্থার এজেন্টের কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এমন এক অপারেশনে র্যাবের নাম, পোশাক ও কৌশল ব্যবহারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরও তৈরি হয়েছে তীব্র অস্বস্তি ও উদ্বেগ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম জানান, নগদ-এর একজন স্থানীয় এজেন্ট আবদুল খালেক সকাল ৮টার দিকে তাঁর নিজ বাসা—উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়ক থেকে নগদের কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল আরও দুই সহকর্মী। বিপুল অঙ্কের এই নগদ অর্থ বহন করা হচ্ছিল দুইটি মোটরসাইকেলে করে।
তবে যখন তাঁরা সড়কের মাঝামাঝি পৌঁছান, ঠিক সেই সময় একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তাঁদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত ২ থেকে ৩ জন ব্যক্তি বের হয়ে হঠাৎই নগদ এজেন্টদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা দেখে মনে হয়েছিল যেন র্যাব কোনো বিশেষ অভিযানে এসেছে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই ছদ্মবেশধারীরা দ্রুত গতিতে ঘটনাস্থলে এসে তিনজনকে ঘিরে ধরে, হঠাৎ করে তাঁদের বাধ্য করে মাইক্রোবাসে উঠতে। এরপর সেই মাইক্রো দ্রুতগতিতে চলে যায়। পরে জানা যায়, উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের একটি ফাঁকা এলাকায় নিয়ে ওই তিনজনকে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁদের কাছ থেকে সব টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
নগদের কর্মকর্তা খালেক জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তাঁরা আসল র্যাব সদস্য নন। তাঁদের পোশাক, আচরণ ও গা-জোয়ারি ভাষা এতটাই নিখুঁত ছিল যে সাধারণ কেউ বুঝতে পারার উপায় ছিল না।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনার পরপরই বিভিন্ন থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের ধরতে একাধিক দল মাঠে নেমেছে। তিনি নিশ্চিত করেন, র্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাঁরাও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছে।
এদিকে, উত্তরা বিভাগের ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, “র্যাবের পোশাক পরে এমন দুঃসাহসিক ছিনতাই কেবল ভয়ঙ্করই নয়, এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর এক ভয়াবহ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত—তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এমন ঘটনার পর চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছেন। র্যাবের পরিচয়ে এমন কৌশলে ছিনতাই হওয়ায় ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকৃত সদস্যদের কার্যক্রমেও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ছিনতাইকারীরা যে পেশাদার এবং পরিকল্পিতভাবে অভিযানটি পরিচালনা করেছে, তাতে তাদের পেছনে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নগদ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে।
ছিনতাইকৃত অর্থ উদ্ধারে অভিযান চলছে এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক ইউনিট ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছায়া অনুসন্ধান শুরু করেছে। তবে এমন ঘটনায় রাজধানীতে ছিনতাইয়ের নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
Leave a comment