বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য অপসারিত সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রথমবারের মতো সরাসরি ব্যাখ্যা দিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ ৩১ মে রাজধানীর পল্টন হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে ৩৫তম জাতীয় হ্যান্ডবলের ফাইনাল দেখতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, সরকার ফারুক আহমেদকে দুর্নীতির কোনো অভিযোগে নয়, বরং তাঁর সময়কার পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় অপসারণ করেছে।
উপদেষ্টা দাবি করেন, বিসিবির গঠনতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) গাইডলাইন মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “ফারুক আহমেদকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। নিয়ম মেনেই তাঁকে পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকার প্রেসিডেন্ট অপসারণ করেনি, পরিচালক পদে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে মাত্র। এর ধারাবাহিকতায় বিসিবির প্রেসিডেন্ট পদও খালি হয়, যেখানে নিয়ম অনুযায়ীই নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেছেন আমিনুল ইসলাম।”
ক্রিকেটে সাম্প্রতিক ব্যর্থতার প্রসঙ্গ টেনে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “এই সরকার আসার পর আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছিলাম টেস্ট সিরিজে। কিন্তু তারপর থেকে পারফরম্যান্সের ক্রমাবনতি দেখা গেছে। আমাদের বিচার করতে হয় খেলাধুলার মান দিয়ে। সেটা আশানুরূপ ছিল না।” তিনি অভিযোগ করেন, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে বিপিএলে একের পর এক অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, যার দায় নিতে হয় সরকারকেও। “খেলোয়াড়দের বেতন, হোটেল বিল পরিশোধে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল—এটা বোর্ডের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক পরিস্থিতি,” বলেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, বোর্ডে ফারুক আহমেদের সঙ্গে বাকিদের টিমওয়ার্ক ছিল না। “ক্রিকেট একটা টিম গেম, বিসিবিতে সেটি হয়নি। বাকি পরিচালকরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন না। সবার সম্মিলিত মতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এমন একটি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে আসিফ মাহমুদ উদাহরণ দেন, “যেমন সিলেকশন কমিটি একজন খেলোয়াড়কে বারবার খারাপ পারফরম্যান্সের পর আর দলে রাখে না, আমরাও তেমনি পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ফারুক আহমেদ অভিযোগ করেছেন, তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, “ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। যেটুকু দরকার, তা করা হয়েছে।”
তবে কি তাঁকে মনোনয়ন দেওয়াই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে যেকোনো সময় পরিচালক মনোনয়ন দিতে পারে, আবার প্রত্যাহার করতেও পারে। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।”
বিসিবিতে সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ জানান, “আমাদের আইসিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। নতুন প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম অনেক দিন আইসিসিতে কাজ করেছেন, তাঁর প্রতি আইসিসির আস্থা আছে। আইসিসি আমাদের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে।”
সবশেষে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “ফারুক আহমেদকে সরানোর সিদ্ধান্ত একটি স্পষ্ট বার্তা—যে কেউ যদি দায়িত্বে থেকেও পারফর্ম করতে না পারে, তবে তাকেও সরতে হবে। আমি নিজেও ব্যর্থ হলে জায়গা ছেড়ে দেব। কিন্তু আমি দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ডুবে যেতে দেব না।”
Leave a comment