Home আন্তর্জাতিক গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু নিহত
আন্তর্জাতিক

গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু নিহত

Share
Share

গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনি শিশুদের জীবন আজ বিপন্নের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু প্রাণ হারাচ্ছে বা গুরুতর আহত হচ্ছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটা কেবল শিশুর মৃত্যুই নয়, এটা একটি প্রজন্মের বিনাশ। আমরা প্রত্যক্ষ করছি কীভাবে একের পর এক শিশুর শৈশব, তাদের স্বপ্ন, এমনকি বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধা, অবরোধ, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে এদের কারও পক্ষে স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়া সম্ভব নয়।’

ইউনিসেফ জানায়, গত মার্চে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হওয়ার পর থেকে মে মাস পর্যন্ত নতুন করে আরও ১,৩০৯ শিশু নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ৩,৭৩৮ জন শিশু। একটি মাত্র পরিবার, আল-নাজ্জারদের মধ্যে ১২ বছরের নিচে ১০ ভাইবোনের মধ্যে মাত্র একটি শিশু প্রাণে বেঁচে আছে, তাও গুরুতর আহত অবস্থায়। একই সময় গাজা সিটির একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে ১৮ শিশু। শিশুরা যেন এখন সংখ্যা হয়ে উঠেছে, আর তাদের মৃত্যু যেন সাধারণ ঘটনার মতোই বিবেচিত হচ্ছে—এমনই মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

এদুয়ার বেগবেদে, ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক, বলেছেন, ‘এই সহিংসতা বন্ধ না হলে আমরা কেবল আরও শিশুর মৃত্যু নয়, বরং পুরো একটি সমাজের ভাঙন দেখতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুরা সংখ্যায় পরিণত হওয়ার জন্য জন্মায় না। এভাবে তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হতে পারে না।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এই সহিংসতা বন্ধ করতে আর কত লাশ লাগবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর কত ভয়াবহতা দেখতে হবে সরাসরি সম্প্রচারে, যাতে তারা সাহস করে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে?’

ইউনিসেফ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, শিশুদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই দরকার খাদ্য, পানি, ওষুধ ও নিরাপত্তা। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রয়োজন, এ নির্মমতা স্থায়ীভাবে থামানো।

বর্তমানে গাজায় খাদ্যসংকট, চিকিৎসার অভাব এবং বারবার স্থানচ্যুতি—এই ত্রিমুখী সঙ্কটের মধ্যে শিশুদের জীবনে নেমে এসেছে এক দীর্ঘমেয়াদি বিভীষিকা। হাসপাতাল, পানি সরবরাহব্যবস্থা, স্কুল, এমনকি তাদের বাসস্থানের অস্তিত্বও একের পর এক মুছে যাচ্ছে।

এই মুহূর্তে গাজায় শিশুদের প্রয়োজন একটিই—শান্তি। তবে শুধু অস্ত্রের স্তব্ধতাই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন বিশ্ব বিবেকের জাগরণ। প্রয়োজন মানুষের জন্য ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ। তা না হলে আরও অনেক শিশু শুধু পরিসংখ্যান হয়ে যাবে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনার ছায়া, ১০ বিদ্রোহীর মৃত্যু

মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের সীমান্তবর্তী তামু জেলায় আচমকা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ১৪ মে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে বিদ্রোহী সংগঠন পা কা ফা (পিকেপি)-এর অন্তর্ভুক্ত ১০...

ধর্মপাশায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ১৫ লাইনম্যানের কর্মস্থলত্যাগ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা উপ–আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১৯ জন লাইনম্যানের মধ্যে ১৫ জনই কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সাত দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় আন্দোলনে অংশ...

Related Articles

চাঁদপুরে ৪০ টি গ্রামে উদযাপিত হয়েছে ঈদ।

সৌদি আরবসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুর জেলার ৪০টি গ্রামে...

দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের শতাধিক গ্রামে আজ পালিত হবে ঈদুল আজহা।

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ শুক্রবার চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল ও আশপাশের জেলার শতাধিক...

মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কোতে ঈদুল আজহায় কোরবানি নিষিদ্ধ

মরক্কো সরকার ঈদুল আজহাকে ঘিরে দেশজুড়ে পশু কোরবানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায়...

ঈদেও সামান্য মাংসের স্বাদ পাবে না গাজার অধিকাংশ মানুষ

গাজার আকাশে হয়তো চাঁদ উঠবে ঈদের আগমনী বার্তা নিয়ে, কিন্তু ভাঙা ঘর,...