Home আন্তর্জাতিক যুক্তরাজ্যের লন্ডনেও বিষধর অ্যাডার সাপের বিশেষ সতর্কবার্তা জারি
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যের লন্ডনেও বিষধর অ্যাডার সাপের বিশেষ সতর্কবার্তা জারি

Share
Share


যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিষধর অ্যাডার সাপের উপস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিষধর সাপ মানুষের জন্য সাধারণত প্রাণঘাতী না হলেও ভয় বা অজ্ঞতার কারণে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থদের জন্য। এবার লন্ডনবাসীদের জন্যও সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে, কারণ রাজধানী শহরেও মিলেছে এই সাপের উপস্থিতি।
২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চল, কর্নওয়াল এবং ওয়েলস জুড়ে অ্যাডার সাপের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়। যুক্তরাজ্যে অ্যাডারই একমাত্র বিষধর সাপ হিসেবে পরিচিত। তবে এটি নতুন কোনো প্রজাতি নয়; বরং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রেই বহু বছর ধরে রয়েছে। চলতি বছরে এদের দেখা যাওয়ার হার আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
স্থানীয় পুলিশ বাহিনী এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। অ্যাডার সাধারণত নির্জন ও গোপন জীবনযাপন করে। তারা সহজে মানুষের সংস্পর্শে আসে না এবং বিপদের মুখে পড়ে গেলে অনেক সময় মৃত সেজে পড়ে থাকে। তবে হঠাৎ বিরক্ত করা হলে তারা আত্মরক্ষার্থে ছোবল দিতে পারে। সাপটি সাধারণত ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে এবং প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
যুক্তরাজ্যের বন্যপ্রাণী সংস্থা ‘দ্য ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অ্যাডারের বিষ সাধারণত মানুষের জন্য মারাত্মক নয়, তবে এর কামড় বেশ ব্যথাদায়ক এবং দেহে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে ছোট শিশু, বৃদ্ধ ও দুর্বল রোগীরা। পোষা কুকুরের জন্যও এই সাপ বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে হাঁটার সময় খোলা প্রাকৃতিক জায়গায় গেলে।
লন্ডন শহরের অনেকেই হয়তো ভাবছেন, মহানগরে এই সাপ কীভাবে আসবে! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অ্যাডার রাজধানী লন্ডনেও রয়েছে। ইংলিশ নেচার ও লন্ডন বায়োডাইভারসিটি পার্টনারশিপের উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রেটার লন্ডনের বিভিন্ন অংশে এই সাপের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষ করে বনাঞ্চল সংলগ্ন অঞ্চল, তৃণভূমি, হিথল্যান্ড এবং পরিত্যক্ত এলাকা—এসব জায়গায় এদের বসবাস গড়ে উঠেছে। সাপগুলো মূলত ইঁদুরজাতীয় ছোট প্রাণী খুঁজে বের করার জন্য এসব জায়গায় বিচরণ করে।
যদিও ঘরবাড়ির বাগানে অ্যাডার দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে শহরের প্রাকৃতিক উদ্যান বা খোলা মাঠে হাঁটার সময় সতর্কতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন বিকেলবেলা বা রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ঘাসের মধ্যে এদের দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। অ্যাডার কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং কোনো প্রাকৃতিক এলাকায় হাঁটার সময় পোষা প্রাণীদের কাছাকাছি রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাজ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশে সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তার সঙ্গে মানবসম্পর্কের জটিলতা আমাদের বন্যপ্রাণী ও শহর ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভারসাম্য তৈরির প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মানিকগঞ্জে পুত্রবধূ-ছেলে মিলে মাকে হত্যার অভিযোগ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় মা লক্ষ্মী রাজবংশীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার বড় ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতির বিরুদ্ধে। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে নিহতের ছোট ছেলে...

থাইল্যান্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

থাইল্যান্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হোসাইন সাঈদ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া...

Related Articles

সিলেট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে শাকিল আহমদ (২৯) নামে এক বাংলাদেশি...

গাজা সিটিতে অবিস্ফোরিত বোমা—ধ্বংসস্তূপে মৃত্যুফাঁদ

গাজা শহরের ধ্বংসস্তূপ এখন শুধুই ধ্বংসাবশেষ নয়—সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবিস্ফোরিত...

আফগান সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষ: পাঁচ পাকিস্তানি সেনাসহ নিহত ৩০

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যখন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে শান্তি...

শীতের আগমনে বিপদের মুখে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবার

ফিলিস্তিনের গাজা শীতের আগমনে ক্রমেই সংকটময় হয়ে উঠছে। জরুরি আশ্রয় ও শীতকালীন...