Home আন্তর্জাতিক নয় সন্তান হারিয়েও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, ফিলিস্তিনি ডা. আল-নাজ্জার।
আন্তর্জাতিকমধ্যপ্রাচ্য

নয় সন্তান হারিয়েও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, ফিলিস্তিনি ডা. আল-নাজ্জার।

Share
Share

ইসরায়েলি বিমান হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে এক মায়ের ১০ সন্তানের মধ্যে নয়জনই নিহত হয়েছে। এই মা ডা. আল-নাজ্জার, পেশায় একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।  এমন এক ক্ষতির পরও তিনি থেমে যাননি- চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বুকে জমে থাকা বিষাদ আর অশ্রু চেপে রেখে, এখনও তিনি অন্য শিশুদের সেবা করে যাচ্ছেন।

ডা. নাজ্জার সেই ভয়াল দিনে তার সন্তানদের বাড়িতে রেখে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে যান। কিছু সময় পর হাসপাতালে আনা হয় তারই সাত সন্তানের পুড়ে যাওয়া দেহ। আরও দুই সন্তান(সাত মাস বয়সি ও ১২ বছরের) নিখোঁজ ছিল, যাদের পরবর্তীতে মৃত বলেই ধরে নেওয়া হয়। ১১ বছর বয়সি আদম, তার একমাত্র জীবিত সন্তান, গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে সে । স্বামী হামদি, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক, সেই একই হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ এক্স পোস্টে লেখেন, হামলার সময় হামদি মাত্রই বাড়ি ফিরেছিলেন। তার ফিরে আসার পরপরই ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় । নয়টি সন্তান- ইয়াহিয়া, রাকান, রাসলান, জিবরান, হাওয়া, রিভাল, সায়দেন, লুকমান ও সিদরা তৎক্ষণাৎ নিহত হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা ইউসুফ আবু আল-রিশ জানান, ডা. নাজ্জার হাসপাতালের চৌকাঠ পেরোনোর পর তাকে দেখে মনে হয়নি, তিনি এত বড় একটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন । তার চোখে ছিল নীরব স্বীকৃতি, কণ্ঠে কেবল আল্লাহর জিকির। আর হাত যেন ব্যস্ত ছিল ব্যথিত শিশুদের চিকিৎসায়, যাদের আশ্রয় এখন কেবল হাসপাতালের চার দেয়াল।

৩৮ বছর বয়সি ডা. নাজ্জার কেবল শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নন, তিনি এখন সেসব চিকিৎসকদের প্রতিনিধি- যারা যুদ্ধের তাণ্ডবের মাঝেও অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

সিভিল ডিফেন্স জানায়, খান ইউনিসে ইসরায়েল তাদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তাদের দাবি, এই এলাকা থেকে হামাসের কিছু সন্দেহভাজন সদস্য আইডিএফের নিকটবর্তী স্থাপনায় কাজ করছিলেন।

ঘটনাস্থলে তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, চারপাশ ধোঁয়া আর আগুনে ঢেকে আছে। মেডিকেল কর্মীরা স্ট্রেচারে আহতদের বহন করছেন, কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে খুঁজে নিচ্ছেন পুড়ে যাওয়া শিশুদের নিথর দেহ। সেই দেহগুলো সাদা কাপড়ে মুড়ে একপাশে শুইয়ে রাখা হয়েছে।

আহত হামদির ভাইঝি ডা. সাহার আল-নাজ্জার বলেন, হামলা যখন ঘটে, তখন হামদি বাচ্চাদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তিনি দেখেন, বাড়িতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। সন্তানরা ভেতরে আটকে আছে ভেবে তিনি ছুটে যান আর তখনই দ্বিতীয় হামলায় আহত হন তিনি।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ডা. নাজ্জারকে ‘অবিচল ফিলিস্তিনি নারী’ বলে অভিহিত করেছে- যিনি নিজের সন্তানদের হারিয়েও অন্যদের জীবন বাঁচানোর কাজ করে যাচ্ছেন।

এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের লক্ষ্য করে পরিকল্পিত আক্রমণেরই অংশ- যার লক্ষ্য গাজার মনোবল ভেঙে ফেলা, তাদের আশা ধ্বংস করা। তবু ও ডা. আলা আল-নাজ্জার দাঁড়িয়ে আছেন- চোখে সন্তানদের শেষ ছবি, বুকে শোক, হাতে ব্যান্ডেজ আর ওষুধ নিয়ে । সন্তানদের মৃত্যুর শোক তার মনোবলকে ভাঙতে পারেনি ।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’ দেখতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে...

বিজয় দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে র‌্যাবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনসমাগমস্থল এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত...

Related Articles

সিলেটে তরুণদের বিদেশমুখিতা বাড়ছে, কারণ ….

সিলেটকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় লন্ডন’। যুক্তরাজ্যে সিলেটি প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কারণে এই...

রাশিয়ার রোস্তভে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা: নিহত ৩

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে রাতভর চালানো ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত...

ওবায়দুল কাদের ও সাদ্দামসহ ৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী...

ভারী বৃষ্টিতে রক্তিম রঙে ঢেকে গেল ইরানের হরমুজ দ্বীপের সমুদ্র

ইরানের পারস্য উপসাগরে অবস্থিত হরমুজ দ্বীপে ভারী বৃষ্টির পর স্থানীয় বাসিন্দা ও...