বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ চেয়েছে । দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং শুরু থেকেই গঠনমূলক সমালোচনা ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করে আসছে।’
এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৌঁছায় বিএনপির প্রতিনিধিদল। পরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন দলটির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা বলেছি, তিনটি বিষয়ের (সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন) একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা সংস্কার চলমান বিষয়। এটা চলতে থাকবে। আমরা আশা করেছি এ সরকার একটা ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবে। সেটা চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে যদি জনগণ আমাদের ক্ষমতায় বসায়, আমরা সেই সংস্কার চলমান রাখব এবং বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা নেব।’
তিনি বিএনপির নেতাদের মামলার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা বলেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে আমরা এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি বিক্ষুব্ধ। সেই স্বৈরাচারী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের যারা দায়ী, তাদের বিচার চাই আমরা।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন , ‘নির্বাচন বিলম্বিত হলে স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব তখন বর্তাবে বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচারপ্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারে গেলে তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাননি, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিএনপি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এ সময় বলেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন তিনটি বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তিনটিই ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু। দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা হলে বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
বৈঠক নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া চলবে। সংস্কার সহসাই সম্ভব। বিচারের কাজ বিচার বিভাগ করবে। সুতরাং ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন সম্ভব এটিও আলোচনা হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি আমরা।
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কি না? জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এটা তারা দেখবেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনেও তিন উপদেষ্টাকে ‘বিতর্কিত’ দাবি করে তাদের পদত্যাগের কথা বলা হয় ।
Leave a comment