যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশের সাবেক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন লন্ডনের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে। এসব সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সম্পদের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সামনে এসেছে।
এনসিএ মোট নয়টি ‘ফ্রিজিং অর্ডার’ বা সম্পদ হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেছে। এ আদেশের মাধ্যমে আহমেদ শায়ান রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান নামের দুই ব্যক্তি তাদের লন্ডনের বিভিন্ন অভিজাত এলাকার সম্পত্তি বিক্রি বা স্থানান্তর করতে পারবেন না। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধান অনুযায়ী, তারা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও বিতর্কিত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা।
জব্দকৃত সম্পত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের গ্রোভেনর স্কয়ার ও গ্রেশাম গার্ডেনসের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ১.২ মিলিয়ন থেকে ৩৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত। এসব সম্পত্তি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, জার্সি ও আইল অফ ম্যানভিত্তিক অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল।
২০১৩ সাল থেকে শেখ হাসিনার প্রধান বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সালমান এফ রহমান বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন রয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় তিনি দেশত্যাগের চেষ্টাকালে আটক হন।
যুক্তরাজ্যের ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’-এর সঙ্গে যৌথ অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান প্রকাশ করে যে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের নামে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিদেশি সম্পদ রয়েছে। এদের মধ্যেই ছিলেন শায়ান ও শাহরিয়ার রহমান।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, জব্দ করা সম্পত্তির মধ্যে একটি বাড়িতে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং তাঁর কন্যা, সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বসবাস করতেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, যদিও তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের নীতিনির্ধারক ডানকান হেমস বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত সন্দেহভাজন সকল সম্পত্তি দ্রুত জব্দ করে পূর্ণ তদন্ত চালিয়ে যাওয়া।”
এনসিএর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “বিষয়টি একটি চলমান নাগরিক তদন্তের অংশ। আমরা বিভিন্ন সম্পত্তির ওপর হাইকোর্ট থেকে ফ্রিজিং অর্ডার পেয়েছি।”
শায়ান রহমানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “আমাদের মক্কেল কোনো ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত নন এবং তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণহারে অভিযোগ আনার বাস্তবতা যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।”
বিষয়টি ঘিরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রপন্থী মহল মনে করছেন, বিদেশে গোপন সম্পদের জবাবদিহির মাধ্যমে অতীতের ক্ষমতাকেন্দ্রিক দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে সরকারপন্থী অনেকেই একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন।
যুক্তরাজ্যে এই ধরনের সম্পদ জব্দের ঘটনা বাংলাদেশি অভিজাত শ্রেণির বিদেশে অর্থ পাচারের বহুল আলোচিত ইস্যুকে আরও কেন্দ্রীয় আলোচনায় এনে দিল। এখন দেখার বিষয়, এই তদন্ত কতটা অগ্রসর হয় এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের সরকারিভাবে কী ধরনের সহযোগিতা হয়।
Leave a comment