Home ইতিহাসের পাতা বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত ব্যাকরণ গ্রন্থের রচয়িতা ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড
ইতিহাসের পাতা

বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত ব্যাকরণ গ্রন্থের রচয়িতা ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড

Share
Share

বাংলা ভাষার লিখিত ব্যাকরণচর্চার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক নাম, ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড। ১৭৫১ সালের ২৫ মে লন্ডনের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই ইংরেজ প্রাচ্যবিদ বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত ব্যাকরণ গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ইংরেজি ভাষায় রচিত হলেও তাঁর ‘আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়েছে প্রচুর বাংলা উদাহরণ ও বাংলা লিপি, যা বাংলা ভাষার ইতিহাসে এক নবদিগন্ত উন্মোচন করে।
জীবনের শুরুর দিকে হ্যালহেড ইংল্যান্ডের বিখ্যাত হ্যারো স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে ক্রাইস্ট চার্চ, অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তবে তার ব্যক্তিগত জীবনের এক প্রেমব্যর্থতা তাকে ভারতে আসতে অনুপ্রাণিত করে। নাট্যকার রিচার্ড শেরিডনের সাথে প্রণয়ে পরাজিত হয়ে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরির সুবাদে কলকাতায় আসেন। এই আগমনই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ভারতে এসে তিনি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’। বাংলা ভাষার ধ্বনি, বর্ণ, রূপ ও বাক্য গঠনের প্রাথমিক বিশ্লেষণ তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। এই গ্রন্থের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলার অক্ষর ও লিপি বিদেশি পাঠকের সামনে উপস্থাপিত হয়, যা বাংলাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
তবে ভাষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছাড়াই রচিত হওয়ায় এই গ্রন্থে কিছু দুর্বলতা থাকলেও, হ্যালহেডের প্রচেষ্টা ছিল অভূতপূর্ব। বাংলা ভাষাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই গ্রন্থটি বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করে। তার কাজের প্রভাব বাংলা ভাষার পরবর্তী ব্যাকরণচর্চার পথ তৈরি করে দেয়।
হ্যালহেড শুধুমাত্র বাংলা নয়, সংস্কৃত এবং ফার্সি ভাষাতেও আগ্রহী ছিলেন। তিনি হিন্দু আইনশাস্ত্রের ইংরেজি সংক্ষিপ্তসার ‘আ কোড অফ জেন্টু ল’ অনুবাদ করেন, যা তৎকালীন ইংরেজ প্রশাসনের আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, গ্রিক ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা ‘দ্য লাভ এপিসলস অফ অ্যারিস্টাইনেটাস’ গ্রন্থটি তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি নিশ্চিত করে।
১৮৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ইতিহাসে তার নাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে একজন অগ্রণী প্রয়াসীর রূপে, যিনি বাংলা ভাষাকে পাশ্চাত্যের চোখে পরিচিত করার প্রথম সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর রচিত ব্যাকরণ আজও ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে দুই বোনের

শুক্রবার (৬ জুন) দুপুরের দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আপন দুই বোনের। উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইচাইল...

তারাকান্দায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মসজিদে ধাক্কা, নিহত হয়েছে বাবা-ছেলে

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মসজিদে ধাক্কা দিলে  বাসের যাত্রী বাবা ও ছেলে নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।...

Related Articles

শুক্রবার ও শনিবারকে সরকারি ছুটি ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের

১৯৯৭ সালের ৩০ মে, এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সরকারি...

জিয়াউর রহমান: এক সামরিক কর্মকর্তা থেকে রাষ্ট্রনায়কের উত্থান 

ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম জিয়াউর রহমান,...

জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পরের এক সপ্তাহে কী ঘটেছিল বাংলাদেশে?

১৯৮১ সালের ৩০শে মে ভোরে চট্টগ্রামের এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছিলেন বিএনপির...

উসমানীয়দের কনস্টানটিনোপল জয়: ১৫০০ বছরের রোমান সাম্রাজ্যের সমাপ্তি

আজ থেকে ৫৭১ বছর আগে, ১৪৫৩ সাল এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল যা...