দেশে ফিরে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ছেড়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জাবের উবায়েদ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন’-এ লেকচারার পদে নিয়োগপত্রও হাতে পেয়েছিলেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১ জুন যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ঠিক এমন এক সময়ে, যখন তিনি বিদেশি চাকরি ছেড়ে দিয়ে, বিমানের টিকিট কেটে দেশে ফেরার অপেক্ষায়, হঠাৎ এক ইমেইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় জানায়—তার নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কারণ জানানো হয়নি।
জাবের উবায়েদ ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ফেব্রুয়ারিতে তিনি পদটির জন্য আবেদন করেন। দুই দফা সাক্ষাৎকার, ডকুমেন্ট জমা ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে গত ২৮ এপ্রিল তাকে নিয়োগের বিষয়টি ইমেইলে নিশ্চিত করা হয় এবং ৯ মে পাঠানো হয় অফার লেটার। এরপর এইচআর বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি যুক্তরাজ্যের চাকরি থেকে পদত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যাসেসমেন্ট অফিসার’ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় মে মাসের শুরুতেই রিজাইনের নোটিশ দেন, ১৪ মে অফিসিয়ালি চাকরি ছাড়েন এবং ২০ মে ঢাকার বিমানের টিকিট কাটেন।
কিন্তু তার ঠিক আগেই—১৫ মে—ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একতরফাভাবে অফার লেটার স্থগিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো কারণ জানানো হয়নি। বারবার যোগাযোগের পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট এইচআর কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল এডুকেশন স্কুলের ডীনও কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু এইচআর বিভাগের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন।
জাবের বলেন, অফার লেটারে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, যোগদান নির্ভর করবে সন্তোষজনক ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের ওপর। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এর আগে ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতাও করেছেন। পরে সম্মানজনক চিভনিং স্কলারশিপে যুক্তরাজ্যে গিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর চাকরি করেছেন, যার মধ্যে ‘আউটরিচ ডেলিভারি অ্যাসিস্ট্যান্ট’ ও ‘অ্যাসেসমেন্ট অফিসার’ পদে কর্মরত ছিলেন। তার পেশাগত নানা সফলতার গল্প ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিজের ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারও করেছে।
জাবের ধারণা, হয়তো তার মাদ্রাসা শিক্ষা-ব্যাকগ্রাউন্ড অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় জুলাই আন্দোলন ঘিরে সক্রিয়তা তাকে নিয়ে ‘আপত্তি’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না দেওয়াকে তিনি ‘অস্বচ্ছতা’ ও ‘চূড়ান্ত অসদাচরণ’ হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, কেউ বলছেন এ ধরনের আচরণই প্রমাণ করে কেন মেধাবীরা দেশছাড়া হন। কেউ কেউ এটিকে ‘বাধাগ্রস্ত বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার বিপরীত দৃষ্টান্ত’ বলেও মন্তব্য করছেন।
জাবের বলেন, “আমি আর ব্র্যাকে যোগ দিচ্ছি না। কিন্তু এমন আচরণের জবাব আমি চাই। তারা একজন পেশাদার মানুষকে এভাবে অপমান করতে পারে কীভাবে? আমার মতো একজনের সঙ্গে যদি এমন হয়, তাহলে অন্যদের সঙ্গেও কী ঘটে চলেছে, সেটা অজানা। এর বিচার হবে, এবং তা হবেই—জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে।”
Leave a comment