ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে নির্মাণাধীন জলকপাটের কাজের অনিয়মের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন চারজন সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় অনিয়মের অভিযোগে উত্তেজিত স্থানীয় গ্রামবাসী ও ঠিকাদারপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ছয়জন আহত হন, যাঁদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার মেঘনার তীরে নতুন জলকপাটের ঢালাইকাজ শুরু হলে স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের জানান, কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ পেয়ে পাঁচ–ছয়জন স্থানীয় সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান এবং দেখতে পান, প্রকল্পস্থলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো কর্মকর্তা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরাও অনুপস্থিত। শ্রমিকেরা নিজেদের মতো করে পাথর, বালু ও সিমেন্টের অনুপাত না মেনে ঢালাই কাজ করছিলেন।
ইত্তেফাকের উপজেলা প্রতিনিধি রফিক সাদী বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করলে শ্রমিকেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এরপর গ্রামবাসী সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় মো. শামীম, মো. সেলিম, মো. ফারুক, সালাউদ্দিন, ইয়ামিনসহ ছয়জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর ইউনিয়নে দুটি জলকপাট নির্মাণ, ৬.২ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ এবং তীর সংরক্ষণের জন্য ব্লক বসানোর কাজ করছে। পুরো প্রকল্পের চুক্তিমূল্য প্রায় ৭৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
তবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. মমিন। তিনি বলেন, “পাথর, বালু ও সিমেন্টের অনুপাত ঠিক ছিল। সাংবাদিকেরা যখন সাইটে যান, তখন আমাদের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। শ্রমিকেরা স্থানীয় ও অশিক্ষিত হওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি থেকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।”
এদিকে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. তানভীর হাসান বলেন, তিনি সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সাইটে ছিলেন, পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের জরুরি সভায় যোগ দেন। তারপর সোনাপুর ও অন্য একটি সাইটে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। তিনিও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ঘটনায় তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহাব্বত খান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় সাংবাদিক মহলে এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।
Leave a comment