ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের মধ্য দিয়ে গভীর মানবিক সংকটে পড়েছে স্থানীয় জনগণ। পানির চরম ঘাটতির মুখে পড়ে শিশুসহ হাজারো মানুষ বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি পান করছে, যার ফলে দ্রুত বাড়ছে ডায়রিয়া, পেটব্যথা এবং কিডনি জটিলতার মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। গাজার বাসিন্দারা বলছেন, ১৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের ফলে বিশুদ্ধ পানি তো দূরের কথা, কোনো পানি পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের এক বাসিন্দা রায়েদ আল–জাহারনেহ বিবিসিকে বলেন, “আমরা জানি এই পানি আমাদের শিশুদের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু আর কোনো উপায় নেই।” চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের জন্য লবণাক্ত পানি দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে পানি উৎপাদন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ইউনিসেফের প্রতিনিধি জোনাথন ক্রিকস জানান, গাজার একটি পানি শোধনাগারে বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমে গেছে। জ্বালানি ছাড়া পানি উৎপাদন ও সরবরাহ কোনোটাই সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ট্রাকভর্তি পানি গাজায় প্রবেশ করলেও তা মানুষের হাতে পৌঁছাতে পারছে না।
জাতিসংঘ জানায়, বুধবার গাজায় ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কিছু পরিমাণ পানি ছিল। তবে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে প্রয়োজন অন্তত ৫০০ ট্রাক। এসব ত্রাণ বিতরণেও রয়েছে নিরাপত্তা ও সমন্বয় ঘাটতির বড় চ্যালেঞ্জ। ওসিএইচএ-এর মুখপাত্র জেনস লার্ক বলেন, নিরাপত্তাহীনতা, লুটপাটের আশঙ্কা এবং ইসরায়েলি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়হীনতায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া।
জ্বালানি প্রবেশে বাধা থাকায় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তর গাজায় বর্তমানে কোনো জ্বালানি না থাকায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারের হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। ‘অপারেশন গিডেয়নস চ্যারিয়টস’ নামে নতুন অভিযানের আওতায় এ সহিংসতা আরও বেড়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, চলমান ১৯ মাসের হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৬৫৫ জন।
উত্তর গাজার ১৪টি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার পর ইসরায়েল তাদের বৈশ্বিক কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরে বিদেশি কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এই সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, গাজা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন হবে এবং সব জিম্মি মুক্তি পাবে। তবে গাজার তীব্র পানি ও মানবিক সংকটের নিরসন যে জরুরি এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে একটি প্রজন্ম চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
Leave a comment