শারজাহের রাতে ব্যাটিংয়ে অস্থিরতা আর বোলিংয়ে অনুপ্রেরণাহীনতার মিশেলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে লজ্জাজনকভাবে হেরে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ৭ উইকেটে হেরে ২–১ ব্যবধানে সিরিজ খোয়াল লিটন দাসের দল। এটি বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে পরাজয়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। প্রথম ওভারেই পারভেজ হোসেন ফিরলে ব্যাটিং ধসের সূচনা হয়। এরপর হায়দার আলীর বাঁহাতি স্পিনে দ্রুত সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয় এবং পরে মেহেদী হাসান। একপ্রান্তে লড়াই চালালেও তানজিদ হাসানের ১৭ বলে ৪০ রানের ইনিংস থামে আকিফ রাজার অফস্টাম্পের বল বোল্ড হয়ে।
৭ ওভারে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এরপরও ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। মাঝের ওভারে মতিউল্লাহর চতুর্বারে বিদায় নেন শামীম হোসেন ও রিশাদ হোসেন। ১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৮৪ রান, যা একসময় শতরানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি করে।
এমন সংকটময় মুহূর্তে জাকের আলী ও হাসান মাহমুদের দৃঢ়তায় ইনিংস টিকে থাকে। নবম উইকেটে ৪৪ রানের কার্যকর জুটি এবং শেষ ওভারে শরীফুল-হাসানের ব্যাটিংয়ে মোট ১৬২ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। শেষ চার ওভারে ৬৪ রান আসায় কিছুটা সম্মান বাঁচে। জাকের ৩৪ বলে ৪১, হাসান অপরাজিত ২৬ ও শরীফুল ১৬ রান করেন। আমিরাতের হয়ে হায়দার আলী ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।
১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আরব আমিরাতের শুরুটা ছিল মসৃণ। শুরুতে দুই ওপেনারের মোলায়েম সূচনা, মাঝের ওভারে দু-একটি উইকেট এলেও চতুর্থ উইকেটে আলিশান শরাফু ও আসিফ খানের ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে স্বাগতিকরা ১৯.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ৫ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে তারা।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদ হোসেন শুরুতে ভালো করলেও নিজের শেষ ওভারে হজম করেন তিনটি ছক্কা, যার মাধ্যমে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়। শরীফুল ইসলাম ১ উইকেট পেলেও বোলিং আক্রমণে ধার ছিল না মোটেই। আলিশান ৬৮* এবং আসিফ ৪১* রান করে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন।
এই হারে পাকিস্তান সফরের আগমুহূর্তে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা লাগল। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিরিজটি খেললেও পারফরম্যান্সে অনুজ্জ্বল বাংলাদেশ নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়বে বলেই অনুমেয়। দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা, উইকেটের ওপর চাপ তৈরি না করতে পারা বোলারদের দুর্বলতা এবং কৌশলগত দীনতা মিলিয়ে সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য রইল হতাশার প্রতিচ্ছবি হয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন আমিরাতের আলিশান শরাফু, আর পুরো সিরিজে দাপুটে পারফরম্যান্সে ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন মুহাম্মদ ওয়াসিম।
Leave a comment