Home আন্তর্জাতিক ভারতে মাওবাদী সাধারণ সম্পাদকসহ ২৭ জন নিহত
আন্তর্জাতিক

ভারতে মাওবাদী সাধারণ সম্পাদকসহ ২৭ জন নিহত

Share
Share

ভারতের নিষিদ্ধ বামপন্থী সশস্ত্র সংগঠন কমিউনিস্ট পার্টি-মাওবাদীর (সিপিআই-মাওবাদী) সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশভা রাও ওরফে বাসভরাজসহ ২৭ জন নকশালকে ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই তথ্য নিশ্চিত করে ঘটনাকে “যুগান্তকারী সাফল্য” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

অমিত শাহ জানান, তিন দশকেরও বেশি সময় পর এই প্রথমবারের মতো সিপিআই (মাওবাদী)–এর একজন সাধারণ সম্পাদককে হত্যা করতে সক্ষম হলো নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাহিনীর সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই সাফল্য মাওবাদী সন্ত্রাস দমনে ভারতের প্রতিশ্রুতি ও অগ্রগতির বড় প্রমাণ।

অভিযানটি চালানো হয় ছত্তিশগড় রাজ্যের নারায়ণপুর জেলার অবুজমাড় অঞ্চলের ঘন জঙ্গলে, যা দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদীদের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেখানে বাসভরাজসহ সংগঠনের একাধিক শীর্ষ নেতার উপস্থিতির তথ্য পেয়ে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। অভিযানে ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনী একত্রে অংশ নেয়।

বাসভরাজ, যিনি তেলেঙ্গানার বাসিন্দা, ২০১৮ সালে মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাওয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়ে মাওবাদী সংগঠনের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন। এর আগে তিনি সংগঠনের সামরিক শাখার নেতৃত্ব দেন এবং একাধিক সহিংস অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে বহু নিরাপত্তা সদস্যের প্রাণহানির কারণ হন।

এই অভিযানে শুধু বাসভরাজের মৃত্যু নয়, বরং সংগঠনের ওপর বড় ধরনের আঘাত হেনেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। পুলিশের তথ্যমতে, এ অভিযানের পাশাপাশি আরও ৫৪ জন নকশালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৮৪ জন আত্মসমর্পণ করেছেন।

দীর্ঘদিন ছত্তিশগড়ের গ্রামীণ অঞ্চলে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলা মাওবাদীদের জন্য এই ধাক্কা প্রায় চূড়ান্ত বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, সংগঠনের নেতৃত্বহীনতা এবং সাংগঠনিক কাঠামোর ভাঙনের ফলে এখন ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের উপস্থিতি বিলুপ্তির পথে।

এর আগে এপ্রিল ও মে মাসে চলা ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ অভিযানে মাওবাদীদের সামরিক ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এই অভিযানে সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুসহ বিশাল ক্ষয়ক্ষতি তাদের সংগঠনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে বড় ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে।

অমিত শাহ তাঁর আগের ঘোষণার পুনরুল্লেখ করে বলেন, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সিপিআই (মাওবাদী) পুরোপুরি নির্মূল হবে—এ লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করছে, এবং আজকের সাফল্য তার একটি দৃশ্যমান অগ্রগতি।

নিরাপত্তা সূত্র বলছে, এই অভিযান শুধু কৌশলগত নয়, বরং প্রতীকী দিক থেকেও মাওবাদী দমনের এক নতুন মাইলফলক, যার প্রভাব পড়বে ভারতের পুরো কেন্দ্রীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় মাওবাদীপ্রবণ এলাকাগুলোতেও।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

রাজধানীর ভাটারায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, দগ্ধ হয়েছে ৪

রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজার এলাকায় নুরের চালা প্রাইমারি স্কুলের পাশের একটি টিনশেড বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন একই পরিবারের চারজন। দুর্ঘটনার পর...

প্রধান উপদেষ্টা নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে

প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে সুযোগ পাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে । প্রধান উপদেষ্টার প্রেস...

Related Articles

জোহরান মামদানির জয় নিয়ে ক্ষোভ: মোদি-ভক্তদের আক্রমণ

  যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে শক্তিশালী পদে উঠেছেন...

জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা

  বৃটিশ রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে, যখন লেবার পার্টির...

তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই)...

৪৮ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে গত ৪৮ ঘণ্টায়...