ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে একটি কালো মাইক্রোবাস থামিয়ে ৭০ ভরি সোনা লুটে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আট মাস আগের এই ঘটনায় ডিবি পুলিশ ইতিমধ্যে কুমিল্লা জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান, কনস্টেবল আবু বকর এবং অভিযানে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের চালক আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্তরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর খালা ও খালাতো বোন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উবারের একটি প্রাইভেট কারে করে তাঁরা পুরান ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল পার হওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁদের গাড়ির সামনে একটি কালো মাইক্রোবাস এসে থামে। মাইক্রোবাসে থাকা চার ব্যক্তি নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে সাইফুলকে হাতকড়া পরিয়ে তাঁদের গাড়িতে তুলে নেন। এরপর সাইফুল ও তাঁর স্বজনদের মারধর করে সব স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুটে নেওয়া হয়। হুমকি দেওয়া হয় মাদক মামলায় ফাঁসানো ও গুলি করে হত্যার। পরে তাঁদের ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে রেখে চলে যায় অভিযুক্তরা।
ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস পর, ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সাহস করে মামলাটি দায়ের করেন সাইফুল ইসলাম। এরপরই তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ইরফান খান জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কনস্টেবল মিজানুর ও চালক আবদুস সালামকে শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মিজানুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এসআই রিপন সরকারের নাম জানান। তাঁর স্বীকারোক্তিতে অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
পুলিশ জানায়, এখনও পলাতক রয়েছেন মামলার আরেক অভিযুক্ত কনস্টেবল হানিফ। তাঁকে ধরতে অভিযান চলছে। সোনা লুটের ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের এমন ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এ ধরনের অপকর্ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। মামলাটি বর্তমানে আদালতের অধীন এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
Leave a comment