ঢাকা, ১৮ মে — গৃহযুদ্ধকবলিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডর’ চালু বা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। তারেক রহমান বলেন, “করিডর কিংবা বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিদ্ধান্ত জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ বা সরকারই নেবে। একটি অস্থায়ী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আমরা অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবিরোধী বলেই মনে করি।”
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে রয়েছে বলেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন রাজপথে নামছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতর ও বাইরে অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে রাজপথে থেকেছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করিনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে সরকারের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এনবিআরের প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে হয়তো কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না, কিন্তু তাড়াহুড়ো করে পরিকল্পনাহীনভাবে তা শুরু করায় পুরো প্রক্রিয়াটি হিতে বিপরীত হয়েছে।”
বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো বিনিয়োগই টেকসই হয় না। শুধু সম্মেলন করে বা বিদেশি কোম্পানিকে সুযোগ দিয়ে বিনিয়োগ আসবে না,”—বলেন তারেক রহমান।
সরকারের গঠনপ্রণালী নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সরকার কোনো এলিট ক্লাব নয়। এটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকা উচিত। স্বৈরাচার যেন আর কখনো গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিতে না পারে, সে জন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার এখনই সময়।”
জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবিও জানান তিনি। বলেন, “সরকার সেই তারিখ ঘোষণাকে কিছু অভিনব শর্তের বেড়াজালে ফেলে রেখেছে, যাতে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি বাড়ছে।”
তাছাড়া, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের সংখ্যা ও তালিকা ১০ মাসেও চূড়ান্ত না করাকে সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতার প্রমাণ বলে দাবি করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদের সদস্য পারভেজ খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অন্যান্য নেতারা।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও বীর যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
Leave a comment