
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশের সুন্দরবনসংলগ্ন মান্দারবাড়িয়া চরে স্পিডবোটে করে এসে ৭৮ জন মানুষকে রেখে চলে যায় বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। পরে বন বিভাগের কর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। এই ঘটনায় চরম উদ্বেগ ও রহস্য সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
অন্যদিকে দিনাজপুরের কিশোরীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ৯ জন বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে। এদের সবাই ভারতে কাজ করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চর। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি এই জনমানবহীন এলাকায় শুক্রবার ভোর চারটার দিকে কয়েকটি স্পিডবোটে বিএসএফ সদস্যরা এসে ৭৮ জন মানুষকে চরে নামিয়ে রেখে চলে যায়। সকাল ৯টার দিকে বন বিভাগের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।
বুড়িগোয়ালিনী বন স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে। রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত তারা বন বিভাগের ক্যাম্পেই অবস্থান করছিলেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বঙ্গোপসাগরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৮ আরবিজি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরার নীলডুমুর ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাজিব জানান, “আমরা বিষয়টি শুনেছি। এটি আরবিজির দায়িত্বাধীন এলাকা। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবে। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিরা আদৌ বাংলাদেশি কি না, সেটিও যাচাই করে দেখা হবে।”
প্রশ্ন উঠেছে, বিএসএফ কেন এমনভাবে একটি গোপন অভিযান চালিয়ে এতগুলো মানুষকে বাংলাদেশে ফেলে গেল? তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল, নাকি পাচার কিংবা কোনো মানবিক সংকটের শিকার—তা নিশ্চিত নয়।
এদিনই দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কিশোরীগঞ্জ সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ ৯ বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছবুর জানান, তাঁরা সবাই কাজের খোঁজে ভারতে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ফেরার সময় বিএসএফের হাতে আটক হন।
সন্ধ্যা সাতটায় কিশোরীগঞ্জ সীমান্ত ফাঁড়ির সুবেদার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই ৯ জনকে বিরল থানায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং শনিবার সকালে আদালতে হাজির করা হবে।
মানবপাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ কিংবা শ্রমিকদের সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। পূর্বেও বড়লেখা সীমান্ত, ঠাকুরগাঁও কিংবা কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর নামে এমন নানা পদ্ধতিতে মানুষ রেখে গেছে বলে একাধিক সংবাদে উঠে এসেছে।
সুন্দরবনের মতো দূর্গম ও পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর এলাকায় এভাবে মানুষ ফেলে যাওয়ার ঘটনা শুধু মানবিক নয়, নিরাপত্তাজনিত দিক থেকেও গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
                                                                        
                                                                        
			            
			            
 
			        
 
			        
 
			        
 
			        
				            
				            
				            
Leave a comment