পাকিস্তান, একটি পরমাণু শক্তিধর দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্র, আজ গুরুতর এক রাজনৈতিক ও সামরিক সংকটের মুখোমুখি—প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তান কি ভেঙে যাচ্ছে?
বেলুচিস্তান প্রদেশ, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চল, স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
৩,৪৭,১৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বেলুচিস্তান পাকিস্তানের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৪৪–৪৮% দখল করে আছে। যদিও এটি গ্যাস, খনিজ, তেল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, তারপরও দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলটি পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে চরমভাবে উপেক্ষিত।
বেলুচদের জন্য সরকারি চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামরিক বাহিনীতে অংশগ্রহণ সব ক্ষেত্রেই সুযোগ ছিল প্রায় নামমাত্র।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
গত কয়েক দশক ধরে পাকিস্তান সরকার বেলুচদের রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরকে দমন করতে গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পরিচালনা করেছে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধরপাকড়, এবং নিপীড়ন।
সাংবাদিক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী এমনকি রাজনৈতিক নেতাদেরও টার্গেট করা হয়েছে। এসব কারণে বেলুচদের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ জমে ওঠে।
২০২৫ সালের মে মাসে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একযোগে বড় মাপের হামলা চালায়, যাতে ১৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
এই ঘটনার পর কোয়েটাসহ কিছু এলাকায় পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বেলুচিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বেলুচ লেখক ও আন্দোলনকারী মীর ইয়ার বেলুচ জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছেন বেলুচিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এবং ভারতের দিল্লিতে বেলুচিস্তানের দূতাবাস স্থাপনের অনুমতি চেয়েছেন।
যদিও আন্তর্জাতিক মহল এখনো এই স্বাধীনতার দাবিকে স্বীকৃতি দেয়নি, তথাপি বেলুচিস্তানের পরিস্থিতি এক নতুন মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তান সরকার সামরিক শক্তি দিয়ে অঞ্চলটি দমন করার চেষ্টা করছে, তবে দিনের পর দিন সেখানে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হচ্ছে।
বেলুচ জনগণ এখন স্বাধীনতার স্বপ্নে আরও সংগঠিত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একসময়ের পূর্ব পাকিস্তান যেমন উপেক্ষা, নিপীড়ন এবং অবিচারের প্রতিবাদে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, আজ বেলুচিস্তানও সেই পথেই হাঁটছে।
প্রশ্ন এখন একটাই: পাকিস্তান কি আবার ভাঙবে? সময়ই দেবে উত্তর, তবে ইতিহাস যেন নিজেকে আবার পুনরাবৃত্ত করছে—এইবার বেলুচিস্তানে।
Leave a comment