Home ইতিহাসের পাতা শাপলা চত্বরে হেফাজতের জড়ো হওয়া, মধ্যরাতে অভিযান
ইতিহাসের পাতা

শাপলা চত্বরে হেফাজতের জড়ো হওয়া, মধ্যরাতে অভিযান

Share
Share

২০১৩ সালের ৫ মে, ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এক উত্তাল ও বিতর্কিত দিনের সাক্ষী হয় দেশবাসী। ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ তাদের ঘোষিত ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে রাজধানীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রে জড়ো হয়। দিনভর চলা বিক্ষোভের পর রাত গভীর হতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহনশীলতার চূড়ান্ত সীমা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলেও, শেষ পর্যন্ত র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতের সমাবেশকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এই অভিযান শুরু হয় রাত ২টা নাগাদ। আগে থেকেই শাপলা চত্বরে অবস্থানকারী হাজার হাজার হেফাজত কর্মী অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল। প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, অবস্থানরতদের একাংশ পেট্রোল বোমা, বাঁশের লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং আশপাশের এলাকা, বিশেষ করে বাংলামোটর, পল্টন, আরামবাগ ও গুলিস্তানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় যৌথবাহিনীর ‘ক্লিয়ারিং অপারেশন’।

অভিযানে পুরো শাপলা চত্বর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আলো-আঁধারিতে শুরু হয় রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারে সংঘর্ষ দমন। ভোরের আলো ফোটার আগেই সমাবেশকারীদের সরিয়ে শাপলা চত্বরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নিরাপত্তা বাহিনী।

অভিযানের পর দিন সকালেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে থাকা হেফাজত সমর্থকদের বিচ্ছিন্নভাবে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করা হয়। ঘটনাস্থলে কতজন হতাহত হয়, সে বিষয়ে পরিস্কার সংখ্যা নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সরকারি হিসাব বলছে, “অনেকেই আহত হলেও নিহতের সংখ্যা খুবই কম,” তবে হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শতাধিক কর্মী নিহত হয়েছেন—যদিও এসব দাবি যাচাইযোগ্য নয় বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।

ঘটনার পরপরই ভোরে রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক প্রচারণার অভিযোগে ইসলামিক টেলিভিশনদিগন্ত টেলিভিশন—এই দুই চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তথ্যমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, “দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ পরিবেশন ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে” তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে আইন প্রণয়ন, নারী নীতির সংশোধন, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণাসহ একাধিক ধর্মীয় ও সামাজিক ইস্যু ছিল। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই আন্দোলনকে তৎকালীন সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন।

ঘটনার এক দশক পরেও ৫ মে ২০১৩-এর এই দিনটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহুল আলোচিত ও বিভাজন সৃষ্টিকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’ দেখতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে...

বিজয় দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে র‌্যাবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনসমাগমস্থল এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত...

Related Articles

ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা

আজ বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং। ৩ পৌষ, ১৪৩২ বাংলা। ২৬ জমাদিউস...

ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা

আজ বুধবার ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং। ২ পৌষ, ১৪৩২ বাংলা। ২৫ জমাদিউস...

ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা

আজ সোমবার ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং। ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বাংলা। ২৩ জমাদিউস...

ইতিহাসের আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা

আজ বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং। ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বাংলা। ১৯ জমাদিউস...