১৭৮৯ সালের ৫ মে—ইউরোপের ইতিহাসে এক সন্ধিক্ষণের দিন। এই দিনেই ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদে সমাবেশ ডাকা হয় ‘এস্টেটস জেনারেল’-এর, যা থেকে ক্রমেই জন্ম নেয় আধুনিক যুগের অন্যতম বৈপ্লবিক আন্দোলন—ফরাসি বিপ্লব। এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউরোপজুড়ে রাজতন্ত্রের ভিত্তি কেঁপে ওঠে এবং বিশ্ব ইতিহাসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
বিপ্লবের সূচনা যদিও প্রতীকি অর্থে ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ দখলের মাধ্যমে বেশি পরিচিত, তবু তার প্রকৃত রাজনৈতিক গতি শুরু হয় ৫ মে ১৭৮৯–এ। সেদিন ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই দীর্ঘ ১৭৫ বছর পর দেশের নানা শ্রেণির প্রতিনিধিদের নিয়ে ডাকেন ‘এস্টেটস জেনারেল’—একটি ধরনের জাতীয় পরিষদ, যেখানে প্রথম শ্রেণি (পাদ্রী), দ্বিতীয় শ্রেণি (কুড়ুলধারী অভিজাত) এবং তৃতীয় শ্রেণি (সাধারণ জনগণ) অংশ নেন। তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা তখন রাজকীয় দমন–পীড়ন, করের ভার এবং রাজনৈতিক অধিকারহীনতায় অতিষ্ঠ।
অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতিপরায়ণ রাজপরিবার, সামাজিক বৈষম্য এবং রাষ্ট্রীয় ঋণে জর্জরিত ফ্রান্সে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বহুদিন ধরেই জমে ছিল। এস্টেটস জেনারেলের বৈঠকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা সমতা ও ভোটাধিকারের দাবি তোলে। তাদের দাবি উপেক্ষা করে রাজা ও অভিজাতরা ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করলে তৃতীয় শ্রেণি পৃথক হয়ে ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’ গঠনের ঘোষণা দেয়। এখান থেকেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
পরবর্তী দিনগুলোতে রাস্তায় নেমে আসে প্যারিসবাসী, ছড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহ, রক্তপাত ও রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থা। ১৭৯৩ সালে রাজা ষোড়শ লুই ও রানি মেরি অ্যান্টোনেত্তের শিরচ্ছেদ হয়। ফরাসি বিপ্লব শুধু ফ্রান্সেই নয়, গোটা বিশ্বেই মুক্তচিন্তা, সাম্য, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বীজ বপন করে।
আজকের দিনে ফিরে দেখা এই ঐতিহাসিক ঘটনার গুরুত্ব আজও অমলিন। ৫ মে, ১৭৮৯ ছিল সেই দিন—যেদিন ইতিহাসের গতিপথ নতুন করে বাঁক নেয়, বদলে যায় মানুষের অধিকার ও রাষ্ট্রের ধারণা।
Leave a comment