কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ ভারতীয় সহ ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনার পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। দু’ দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানামুখী অস্থিরতা। বেড়েছে উত্তেজনা। বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পরস্পরের প্রতি। এদিকে ভারতের নানা রাজ্যে থাকা কাশ্মীরিরা পড়েছেন বেশ বেকায়দায়। ভারতীয়রা তাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন ।
গত কয়েকদিনে ভারতের নানা জায়গায় কাশ্মীরি মানুষদের হেনস্তা, মারধর এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়ারও খবর এসেছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে।
মূলত কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের যারা অন্যান্য রাজ্যে পড়াশোনা করছেন তাদের এ ধরনের হেনস্তা ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে । সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও কাশ্মীরিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে।
কাশ্মীরি ছাত্রদের একটি সর্বভারতীয় সংগঠন জানিয়েছে, হেনস্তার ভয়ে অনেক কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রী গত কয়েকদিন ধরে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন। একই সঙ্গে মুসলমান-বিরোধী ঘৃণাও ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যমে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পেহেলগাম হামলার পর থেকে কাশ্মীরি এবং মুসলমান-বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশিই প্রবলভাবে মৌখিক আক্রমণ করা হচ্ছে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মানুষদেরও।
পেহেলগামের হামলার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে, তাই ভারতের মানুষদের মধ্যেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নানা জায়গায় পাকিস্তানের পতাকাও পোড়ানো হচ্ছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সামনে ২৬টি পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছেন। আবার ত্রিপুরার আগরতলাতেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা ভিডিও দেখা যাচ্ছে যেখানে রাস্তায় মানুষের চলাচলের পথে পাকিস্তানের পতাকা সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে তার ওপর দিয়েই মানুষ হাঁটতে পারেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও দেখা গেছে, উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের এক ব্যক্তি যিনি নিজেকে হিন্দু নামধারী একটি সংগঠনের নেতা বলে দাবি করছেন এবং বলছেন যে, কাশ্মীরিদের দেরাদুনের যেখানেই দেখা যাবে, অবশ্যই তাদের ব্যবস্থা হবে। তিনি কয়েকজন কাশ্মীরি ছাত্রকে শহর ছাড়তে হুমকিও দিচ্ছেন, এই ভিডিও-ও সামনে এসেছে।
এ ধরনের প্রতিটা ঘটনারই খবর রাখছে বলে জানিয়েছে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সর্বভারতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েমি বলেন, ‘দেরাদুনের ঘটনায় যাদের হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল, তাদের আটক করা হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছে। তবুও ঘটনা তো ঘটেই চলেছে। এই আটক হওয়ার ঘটনাটা জানতে পারলে ছোটখাটো ওই সব সংগঠনগুলো সচেতন হবে কি না জানি না।’
তার ভাষ্যমতে, সারা দেশ থেকেই কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা হেনস্তা-হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছেন। তারা একটি বিশেষ হেল্পলাইনও খুলেছেন। তিনি বললেন, ‘দেরাদুন, চণ্ডীগড়, প্রয়াগরাজের মতো বড় শহরসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত আটটি গুরুতর মারধর, হুমকি ও হেনস্তার ঘটনা হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশ থেকে অসংখ্য ঘটনার খবর আসছে, যেখানে আমাদের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা হেনস্তা বা হুমকির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছেন।
Leave a comment