কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার দুই দিন পর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর একাধিক স্থানে এই গোলাগুলি হয় বলে দাবি করেছে ভারতের সামরিক সূত্র। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথম গুলি চালায় পাকিস্তান, যার জবাবে পাল্টা গুলি ছোড়ে ভারতীয় সেনারাও।
ভারতীয় সেনা সূত্র বলছে, ঘটনাগুলো ছোট পরিসরে হলেও তা ছিল পরিকল্পিত এবং উত্তেজনাপূর্ণ। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই গোলাগুলির ঘটনা কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
গত মঙ্গলবার পেহেলগামে যে বন্দুকধারী হামলা হয়, তাতে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এই হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে ভারত, যার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়।
হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, বাণিজ্য স্থগিত, আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ পাঁচটি কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত, দেশটির বিমানের আকাশসীমা বন্ধ এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতেরও ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে পাকিস্তান সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, “এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন হলে তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।”
এই পারস্পরিক উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল এক বক্তব্যে বলেন, “যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত কিংবা পরিকল্পনাকারী, তাদের কল্পনাতীত মূল্য দিতে হবে।” বিহারে এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি আরও বলেন, “১৪০ কোটির ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসবাদকে ধুলায় মিশিয়ে দেবে।”
প্রসঙ্গত, পেহেলগামের হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইয়েবার সম্পর্ক রয়েছে বলে ভারতের দাবি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এই হামলায় জড়িত দুজন হামলাকারী পাকিস্তানের নাগরিক।
জাতিসংঘ মহাসচিব ইতোমধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে “ধৈর্য” ধরার আহ্বান জানালেও, সীমান্তে গোলাগুলি, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং পারস্পরিক হুঁশিয়ারিতে উপমহাদেশে আবারও যুদ্ধংদেহী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
Leave a comment