কাশ্মীরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় গুরুতর গাফিলতির বিষয়টি অবশেষে স্বীকার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকে এই স্বীকারোক্তি আসে সরকারি পক্ষ থেকে। সরকার জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম অঞ্চলে সাম্প্রতিক হামলার সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকা ছিল এক বড় ভুল, যা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকারি পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, হামলার জন্য পাকিস্তানই মূলত দায়ী এবং তাকে কড়া জবাব দেওয়া হবে। তবে এই বক্তব্যের পাশাপাশি সরকারকে মুখোমুখি হতে হয় বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রশ্ন তোলেন, সংকটকালীন এমন একটি মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন বৈঠকে উপস্থিত থাকলেন না এবং কেন তিনি বিহারের জনসভা বাতিল করলেন না।
বৈঠকের সর্বদলীয় চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। তাঁরা বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের মূল রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (পিডিপি) এই বৈঠকে ডাকা হয়নি, যা প্রমাণ করে এটি প্রকৃত অর্থে সর্বদলীয় বৈঠক ছিল না। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, সব দলের অংশগ্রহণে প্রধানমন্ত্রীকে প্রকৃত সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে হবে।
বৈঠকে বিরোধীরা সরকারের গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তোলে। তারা প্রশ্ন করেন, এত বড় হামলার আগে গোয়েন্দারা কোনো সতর্কবার্তা পেলেন না কেন? হামলার সময় সেখানে একজন নিরাপত্তারক্ষীও কেন ছিল না? এটি নিছক বিচ্ছিন্ন হামলা নয়, বরং পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র—এমন দাবিও তোলেন বিরোধী নেতারা।
সরকার দাবি করে, পেহেলগামের পর্যটন রুটটি সরকার জানার আগেই স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা খুলে দেয়, ফলে প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে পারেনি। প্রতি বছর জুনে অমরনাথ যাত্রার আগে রুটটি খুলে দেওয়া হলেও এবার তা ২০ এপ্রিলেই চালু করা হয়, যা সন্ত্রাসীদের সুযোগ করে দেয়।
বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ বলার সরকারি দাবি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিরোধীরা বলেন, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় যেভাবে আঘাত হেনেছে, তা প্রমাণ করে এখনো ওই অঞ্চল নিরাপদ নয়।
এ ছাড়া বৈঠকে বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধীরা। তাঁরা বলেন, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই হামলাকেও সাম্প্রদায়িকভাবে দেখানোর চেষ্টা চলছে, যা দেশকে বিভক্ত করছে। এই ‘ধর্মীয় মেরুকরণ’ বন্ধ করা জরুরি বলেও মত দেন তাঁরা।
সর্বোপরি, কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতীয় প্রশাসনের জন্য একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—যার উত্তর এখন শুধু নীতিগত নয়, বাস্তব কৌশলেও খোঁজার সময় এসেছে।
Leave a comment