স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন এক বিতর্কিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সামাজিক মাধ্যমে সরব আলোচনার পর বাতিল করা হয়েছে তার বাবা বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স, যেটি এক মাস আগেই মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজের নামে ইস্যু হয়েছিল।
এই ঘটনায় উপদেষ্টা দাবি করছেন, তার বাবা কেবলমাত্র সরল বিশ্বাসে একজন পরিচিত ব্যক্তির অনুরোধে লাইসেন্স করেছিলেন। তিনি বলেন, “বাবা ঠিকাদারি ব্যবসা করেন না, আর কোনো কাজেও এই লাইসেন্স ব্যবহৃত হয়নি।”
বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, স্থানীয় এক ঠিকাদার সুবিধা পাওয়ার আশায় তার বাবাকে লাইসেন্স নিতে রাজি করান। পুরো প্রক্রিয়াটি ওই ঠিকাদারই চালিয়েছেন, তার বাবা শুধু স্বাক্ষর করেছেন ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছেন।
তবে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে অনেককেই। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “উপদেষ্টার স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্বীকার করে লাইসেন্স বাতিল করা ইতিবাচক হলেও, বিষয়টি প্রকাশ না পেলে কী হতো তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”
এদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে উপদেষ্টার নিজের মন্তব্যও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, “আমলা ও প্রকৌশলীদের মধ্যে একধরনের ‘ভয়’ তৈরি হয়েছে—ক্ষমতাবানদের আত্মীয়দের সুবিধা না দিলে বিপদে পড়বেন ভেবে তারা কিছু বলেন না।”
অন্যদিকে, বিতর্ক তৈরি হয়েছে উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়েও। তার বিরুদ্ধে ‘তদবির বাণিজ্য’র অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর, সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যদিও উপদেষ্টা দাবি করেন, “ও আগে থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এজন্য পদত্যাগ করেছে।”
বাবার লাইসেন্স ইস্যুতে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরল এক দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। কিন্তু এটিকে ‘কৌশলী ব্যাখ্যা’ হিসেবেও দেখছেন অনেকে। কারণ, বিল্লাল হোসেনের পেছনে থাকা আসল উদ্যোক্তা কে—সেই প্রশ্ন আজও থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা নয়, সুশাসনের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বাস্তবায়িত জবাবদিহি ও প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার। নইলে, যে ব্যবস্থায় ‘ভুল’ সহজে হয়ে যায়, সেখানে একদিন বড় দুর্নীতিও ‘দুর্ভাগ্যজনিত ভুল’ হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হবে সমাজ।
সূত্রঃ বিবিসি নিউজ
Leave a comment