
কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরি মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হুমকি, হয়রানি ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও এবং কাশ্মীরি নেতাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে এক ভীতিকর পরিস্থিতির চিত্র।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, যেসব রাজ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হুমকি ও হামলার অভিযোগ এসেছে, তার সরকার সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের একজন মুখপাত্র জানান, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, বিভিন্ন রাজ্যের কলেজ ও পাবলিক স্পেসে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এই ঘটনাগুলোর বেশিরভাগেই উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে।
কাশ্মীরের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা কামনা করেছেন।
জম্মু ও কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নাসির খুইহামি একাধিক ভিডিও প্রকাশ করে জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী কাশ্মীরি মুসলিম শিক্ষার্থীদের রাজ্য ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে যে, তারা যদি রাজ্য না ছাড়ে, তাহলে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হবে।
খুইহামি আরও জানান, হিমাচল প্রদেশের কাংরা জেলার আর্নি ইউনিভার্সিটির কাশ্মীরি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁরা ফোন করে জানিয়েছেন, উগ্রপন্থীদের হাতে তাঁরা গালিগালাজ, অপমান এবং এমনকি শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন।
যদিও এসব ভিডিও এবং অভিযোগের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি, তবে ক্রমবর্ধমান এই নিপীড়নের ঘটনায় কাশ্মীরি পরিবার ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। অনেকেই তাঁদের সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে আনার চিন্তাও করছেন।
এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে শিক্ষা, মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে ভারতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে এই সহিংসতা আরও বিস্তৃত আকার নিতে পারে এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য তা হবে চরম হুমকি।
Leave a comment