Home আন্তর্জাতিক ইউনূস-মোদি বৈঠকে আলোড়ন, হতাশা আওয়ামী শিবিরে
আন্তর্জাতিক

ইউনূস-মোদি বৈঠকে আলোড়ন, হতাশা আওয়ামী শিবিরে

Share
Share

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার আগপর্যন্ত বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো শুরুতে জানায়, এমন বৈঠকের কোনো সম্ভাবনাই নেই। এমনকি নরেন্দ্র মোদির নিজস্ব সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বার্তায়ও এই সাক্ষাৎ নিয়ে কোনো ইঙ্গিত ছিল না।

তবে নাটকীয়ভাবে বৈঠকটি শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হয়, যা পূর্ব পরিকল্পিত ২০ মিনিটের পরিবর্তে চলে প্রায় ৪০ মিনিট। যদিও বৈঠকে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা তাৎক্ষণিক ফলাফল আসেনি, তবুও এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তাৎপর্যকে খাটো করে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। ঢাকার কূটনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন—এ বৈঠক একটি তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে, তবে সেই পক্ষ কারা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈঠকের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় ছিল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ইউনূসের বক্তব্য। ধারণা করা হচ্ছিল ভারত শুধুমাত্র কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই বিষয়টি নেবে। কিন্তু ইউনূস সরাসরি মোদির সামনে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করায় ভারত ‘অপ্রস্তুত’ হয়ে পড়ে। কূটনীতিকরা বলছেন, মোদির সামনে এমন স্পষ্ট অবস্থান ভারত আগে থেকেই প্রত্যাশা করেনি।

এই বৈঠকের পর থেকেই আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ মহলে চরম হতাশা ও চাপা ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত সরকারের অবস্থানকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ বেড়েছে। হাজার হাজার আওয়ামী নেতাকর্মী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। অনেকে সেখানে ‘ম্যানেজ করে’ থাকার চেষ্টা করছেন, আবার কেউ কেউ গোপনে ফিরে আসার পথ খুঁজছেন।

বৈঠকে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গও উঠে আসে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এই অভিযোগগুলো অনেকটাই ‘প্রোপাগান্ডা’। নরেন্দ্র মোদিকে এমনই তথ্য জানানো হয় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়ার কারণে ভারত এখন আর কোনো একক দলকে সমর্থনের বার্তা দিতে আগ্রহী নয়। বরং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখতে চায় তারা। পাশাপাশি, ভারত দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছে—যেটা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরও আকাঙ্ক্ষা।

বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলোও এই পরিস্থিতিকে ঘনীভূত করেছে। যদিও সরকারপক্ষ সেসব প্রতিবেদনকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছে, তবু বিষয়টি নিয়ে ভাববার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।

ইউনূস-মোদি বৈঠক কেবল দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ নয়, বরং এটি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। আওয়ামী শিবিরের হতাশা, ভারতের নরম অবস্থান, এবং শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ মিলিয়ে বৈঠকটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন জটিলতার আভাস দিয়েছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রিয়া গোপের মৃত্যুর ১১ মাস পর পুলিশের মামলা

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বাড়ির ছাদে বাবার কোলে থাকা অবস্থায় গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপের । ১১ মাস পর...

কাজাখস্তান জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখা পোশাক পরা নিষিদ্ধ করেছে

জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখা পোশাক পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কাজাখস্তান সরকার। সোমবার (৩০ জুন) দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ এ বিষয়ে একটি নতুন আইন...

Related Articles

তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই)...

৪৮ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে গত ৪৮ ঘণ্টায়...

করাচিতে পাঁচ তলা ভবন ধসে নিহত হয়েছে ৫ জন

পাকিস্তানের করাচিতে একটি পাঁচ তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত...

হিমাচলে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে ৬৯ জন নিহত হয়েছে

বড় দুর্যোগের কবলে পড়েছে ভারতের হিমাচল প্রদেশ। রাজ্যটিতে টানা ভারী বর্ষণ, আকস্মিক...