সিরিয়ায় ইসরায়েলের নিয়মিত সামরিক অভিযানের মধ্যে থেকেও মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত অঞ্চলে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানিয়েছেন, তুরস্ক চাইছে না সিরিয়ায় চলমান উত্তেজনা তাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে টেনে নিক।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার একান্ত সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব কথা বলেন ফিদান। তিনি জানান, সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সরকার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে বিশ্বাস করে আঙ্কারা। ফলে, তুরস্ক এখনই কোনো সামরিক উত্তেজনায় জড়াতে চায় না।
ইসরায়েল ডিসেম্বর থেকে সিরিয়ার নতুন সরকারের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আসছে, যা ওই সরকারের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক এসব হামলাকে সিরিয়ার ভূখণ্ডে অনধিকার প্রবেশ হিসেবে দেখছে। তবু ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
এক প্রশ্নের উত্তরে হাকান ফিদান বলেন, “সিরিয়ার নতুন প্রশাসন যদি প্রতিবেশী ইসরায়েলের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু বোঝাপড়ায় যেতে চায়, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। এটি সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।” তিনি আরও যোগ করেন, আঞ্চলিক শান্তির জন্য মতবিরোধ নয়, বরং কূটনৈতিক আলাপের পথই সবচেয়ে উপযোগী।
তবে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিষয়ে তুরস্ক তার অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেনি। ২০২৩ সালে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছে তারা। ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ এনে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তুরস্ক। এমনকি সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্কও স্থগিত করেছে তারা।
অন্যদিকে, ইসরায়েল এসব গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং স্পষ্ট করেছে, সিরিয়ায় তারা কোনো বৈরী শক্তির উপস্থিতি সহ্য করবে না। ফলে, মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূরাজনৈতিক সমীকরণে তুরস্ক একদিকে যেমন নিজস্ব অবস্থানে অনড়, তেমনি সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সাক্ষাৎকারের শেষভাগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান সংক্রান্ত সাম্প্রতিক হুমকির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফিদান বলেন, আঙ্কারা চায় না কেউ তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে হামলা চালাক। তুরস্কের অবস্থান বরাবরই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে এবং তারা আশা করে কূটনৈতিক সংলাপই হবে মতবিরোধ মেটানোর মূল পথ।
Leave a comment