সিলেট—বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানে সবসময় রাজনীতির আলাদা গুরুত্ব ছিল, বিশেষ করে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কারণে। বিগত ১৫ বছরে সিলেটের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন চারজন প্রভাবশালী নেতা, যাদের অনেকেই “খলিফা” নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। তবে সময় বদলেছে, পাল্টেছে ক্ষমতার সমীকরণ। একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই নেতারা আজ কোথায়?
৫ আগস্টের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই সিলেটের এই চার শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। কেউ লন্ডনে, কেউ দুবাইয়ে, আবার কেউ হয়তো ভারত হয়ে ইউরোপের কোনো দেশে।
সিলেটের রাজনীতি মূলত এক সময় পঞ্চপাণ্ডবের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এই গ্রুপের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে এসে তিনি দ্রুত নিজের বলয় তৈরি করেন। হাইকমান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে তিনি নিজ দলকে সুসংগঠিত করেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তাকে আর দেশে দেখা যায়নি। শোনা যায়, তিনি সীমান্ত পেরিয়ে লন্ডনে চলে গেছেন।
তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, হাবিবুর রহমান হাবিব, রঞ্জিত চন্দ্র সরকার এবং বিধান কুমার সাহা। এদের কেউ লন্ডন, কেউ দুবাই আবার কেউ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই নেতাদের কেউই সিলেট এয়ারপোর্ট ব্যবহার করেননি। বরং সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে তারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দাবি, তিনি নিয়মিত প্রক্রিয়াতেই লন্ডনে পৌঁছেছেন, কিন্তু স্থানীয়রা বলেন, তিনি ভারত হয়ে গেছেন।
সিলেটের আলোচিত নেতা রঞ্জিত চন্দ্র সরকার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ভারতের শিলংয়ে অবস্থান করছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, নাদেল কলকাতা থেকে ভার্চ্যুয়ালভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সিলেটের সাধারণ মানুষ এখনো এই নেতাদের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা বিচার চান, চান জবাবদিহিতা। সময়ের সাথে সাথে হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে, কিন্তু সিলেটের রাজনীতিতে এই চার খলিফার গল্প একসময় ইতিহাস হয়ে থাকবে।
Leave a comment