Home ধর্ম ও জীবন ইসলাম সাহাবী আবুজর গিফারী (রা.): সত্যের নির্ভীক সৈনিক
ইসলামজাতীয়

সাহাবী আবুজর গিফারী (রা.): সত্যের নির্ভীক সৈনিক

Share
Share

ইসলামের ইতিহাসে সাহাবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁরা ইসলামের বার্তা প্রচারে যেমন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবুজর গিফারী (রা.), যিনি ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম বিশিষ্ট সাহাবী। ৬৫৪ সালের ২ মার্চ (হিজরি ৩২ সনের ১১ জিলহজ) তিনি পরলোকগমন করেন।
আবুজর গিফারী (রা.)-এর জীবন ও ইসলাম গ্রহণ
আবুজর গিফারী (রা.) ইসলামের প্রথমদিকের অনুসারীদের একজন ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল জুন্দুব ইবন জুনাদা। তিনি গিফার গোত্রের একজন সদস্য ছিলেন, যা ছিল একটি যাযাবর আরব গোষ্ঠী।
মহানবী (সা.)-এর নবুয়তের খবর শুনে তিনি মক্কায় আসেন এবং সত্য অনুসন্ধানে রওনা দেন। নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং নির্দ্বিধায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সাহসী, স্পষ্টবাদী ও সত্যবাদী, যা ইসলামের প্রচারে তাঁকে অগ্রগামী করেছে।
ন্যায়বিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান
আবুজর গিফারী (রা.) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অবিচল। তিনি ধনী-গরিবের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন এবং বিত্তশালীদের অহংকার ও সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করতেন। ইসলামের অর্থনৈতিক নীতির কঠোর সমর্থক হওয়ায় তিনি শাসকদের সমালোচনা করতেও ভয় পেতেন না।
হযরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে তিনি বিত্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে থাকেন। তাঁর স্পষ্টবাদিতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে তাঁকে মদিনা থেকে সিরিয়ার দামেস্ক ও পরে রাবজাহ নামক স্থানে নির্বাসিত করা হয়।
পরিণতি ও মৃত্যু
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন এই সাহাবী ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। তিনি সম্পদ ও প্রাচুর্যের মোহকে উপেক্ষা করে এক নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি সম্পূর্ণ নিঃস্ব অবস্থায় ছিলেন এবং রাবজাহ নামক জায়গায় তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে ইসলামী জগতে এক শোকের ছায়া নেমে আসে।
আবুজর গিফারী (রা.) ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তাঁর সংগ্রামী জীবন আজও সকল মুসলমানের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতা, ন্যায়বিচারের প্রতি অবিচল আস্থা এবং ইসলামের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

দশ লাখ ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’ অভিবাসন ভিসা চালু  করলো যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী ধনী বিদেশিদের জন্য নতুন ভিসা কর্মসূচি চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ‘ট্রাম্প গোল্ড ভিসা’ নামের এই বিশেষ প্রোগ্রামের আওতায়...

কঠোর নিরাপত্তায় আল-আকসায় ইসরায়েলিদের অনুপ্রবেশ, উত্তেজনা চরমে

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই প্রায় দুই শতাধিক ইসরায়েলি জোরপূর্বক প্রবেশ করেছে । ইসরায়েলি পুলিশের সহায়তায় তারা পবিত্র স্থানটিতে...

Related Articles

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’...

বিজয় দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে র‌্যাবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন...

মহান বিজয় দিবস আজ: স্বাধীনতার গৌরব ও আত্মত্যাগের চিরস্মরণীয় দিন

আজ ১৬ ডিসেম্বর—বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী...

হাদী গুলিবিদ্ধের ঘটনা: শেরপুরের বারোমারি সীমান্ত থেকে ২ জন আটক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সীমান্ত...