মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছেন বলে দাবি করেছে মিসর ও জর্ডান। তাদের মতে, এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখতে সফল হয়েছে। এমনকি মিসরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মিসরের বিকল্প প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে।
মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিসরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আরব বিশ্বের সমর্থনে মিসর গাজার জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা ট্রাম্প গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ওয়াশিংটন সফর এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে বাদশাহর রুদ্ধদ্বার বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে এবং এটি গাজার ভবিষ্যৎ বিষয়ে একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মিসরের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বাদশাহ আবদুল্লাহ গোপন বৈঠকে ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি উগ্রপন্থাকে উসকে দিতে পারে এবং এতে মার্কিন মিত্র সরকারগুলো সংকটে পড়তে পারে। ট্রাম্প তার এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্বসহকারে শুনেছেন এবং নীতিগতভাবে গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন।
এদিকে, মিসর এই কূটনৈতিক সাফল্য কাজে লাগিয়ে গাজার শাসক দল হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায় এবং এর ফলে ছয়জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। এই জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে গাজার পুনর্গঠনের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ইসরায়েল গাজায় ভ্রাম্যমাণ বাড়ি প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, যা আগে তারা নিষিদ্ধ করেছিল।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ মূল্যায়ন অনুযায়ী, গাজা ও পশ্চিম তীর পুনর্গঠনে পাঁচ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে প্রথম তিন বছরেই লাগবে দুই হাজার কোটি ডলার। এদিকে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই সৌদি আরব সফরে যেতে পারেন।
মিসরের পরিকল্পনায় গাজার নতুন প্রশাসন থেকে হামাস ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) উভয়কেই বাদ রাখা হয়েছে। তবে ২০০৭ সাল থেকে গাজায় দায়িত্ব পালন করা পিএ পুলিশ বাহিনীই প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজা পরিস্থিতি যেন লেবাননের মতো হয়—যেখানে হিজবুল্লাহ রাষ্ট্রের বাইরে আলাদা সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে কার্যক্রম চালায়—তা নিশ্চিত করতে উপসাগরীয় দেশগুলো সক্রিয় থাকবে। গাজার পুনর্গঠনে তাদের বিনিয়োগের মাধ্যমেই এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে।
Leave a comment