Home জাতীয় বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থার যাত্রা
জাতীয়

বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থার যাত্রা

Share
Share

বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, যখন দেশের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। এই দিনটি বাংলাদেশের বিমান চলাচলের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, কারণ এটি বেসরকারি খাতে এভিয়েশন ব্যবসার দ্বার উন্মোচন করেছিল এবং দেশের আকাশপথে নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করেছিল।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আকাশপথে একমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রী ও কার্গো পরিবহন করত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের একক নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেবা নানা সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে ছিল ফ্লাইট সংখ্যা কম হওয়া, টিকিটের উচ্চমূল্য, কম গন্তব্য, এবং যাত্রীসেবার মানের ঘাটতি। এসব কারণে বেসরকারি বিমান সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য এভিয়েশন খাত উন্মুক্ত করে। এর ফলে জিএমজি এয়ারলাইন্স প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ১৯৯৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো যাত্রী পরিবহন শুরু করে।
জিএমজি এয়ারলাইন্স (GMG Airlines) ছিল বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা, যা ১৯৯৭ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। প্রথমদিকে এটি প্রধানত ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে যাত্রী পরিবহন করত। স্বল্প খরচে মানসম্মত সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা এই সংস্থা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
জিএমজি’র সফলতার পর অন্যান্য বেসরকারি এয়ারলাইনস যেমন ইউএস-বাংলা, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভোএয়ার, এবং বিমান ব্যবসায় নতুন করে যুক্ত হওয়া এয়ার অ্যাস্ট্রা পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন শুরু করে।
১৯৯৭ সালে প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থার যাত্রা শুরুর ফলে বাংলাদেশে বিমান চলাচল ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। এর ফলে—
✔️ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়, ফলে যাত্রীসেবা ও সুবিধার মানোন্নয়ন ঘটে।
✔️ টিকিটের মূল্য তুলনামূলকভাবে কমে আসে, ফলে মধ্যবিত্তরাও সহজে বিমান ভ্রমণের সুযোগ পেতে থাকে।
✔️ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিকল্প অপশন তৈরি হয়, যা ব্যবসা ও পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
✔️ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, কারণ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো বহু পাইলট, কেবিন ক্রু, গ্রাউন্ড স্টাফ ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়।
১৯৯৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিমান চলাচলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিমান সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করে, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে। এর ফলে দেশের ভ্রমণ ব্যবস্থা আরও গতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে এবং জনগণ উন্নত মানের বিমানসেবা পাওয়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, যা দেশের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ

বাগেরহাট পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক দল নেতা আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।...

মিছিল-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বাম জোটের ক্ষোভ

রাজধানীতে সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তাঁরা একে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপচেষ্টা আখ্যা দিয়ে...

Related Articles

নড়াইলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১, আহত ৮

নড়াইলের কালিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন...

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

ধর্ষণের মামলায় ফাঁসির সাজা নির্ধারণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে পাঁচ দফা...

কাহালুতে খাবার দেওয়ার কথা বলে ২ শিশুকে ধর্ষণ

বগুড়ার কাহালুতে খাবার দেওয়ার কথা বলে ছয় বছর বয়সী দুই শিশুকে ধর্ষণের...

বরিশালে শিশু ধর্ষণের আসামি গণপিটুনিতে নিহত

বরিশালে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত এক যুবক গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৫...