দেশের রাজনৈতিক সংকট ও চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সিলেট বিএনপির শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখতে রোববার দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠক করেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। সেখানে তিনি দলীয় নেতাদের কঠোর বার্তা দেন যে, ব্যক্তিগত কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায় দল নেবে না এবং সংগঠনের মধ্যে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নেতাদের মাধ্যমে তিনি এই বার্তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বৈঠকে নেতাকর্মীদের জন্য বেশ কিছু কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেওয়া বন্ধ করবেন, যাতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এটি নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। এছাড়া, যদি কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সেই নাম জানাতে হবে। তারা ব্যর্থ হলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যারা এসব অনুপ্রবেশকারীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, দলের কোনো সদস্য যদি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে প্রশাসনকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হবে। মহানগর বিএনপির নেতাদের নগরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে, একইভাবে জেলা বিএনপির নেতাদের জেলা এলাকার অবস্থা নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসময় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বিএনপির বিরুদ্ধে চলমান প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, দেশের ভেতরে ও বাইরে বিএনপিকে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র চলছে, কিন্তু ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না, কারণ বিএনপি জনগণের দল। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে কাজ করতে হবে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি সরকারের নানা জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এবং ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসবের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
বৈঠকে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের দোসরদের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং যেকোনো মূল্যে সংগঠনের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহ নেওয়াজ বখত চৌধুরী তারেক, জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান প্রমুখ।
সভায় নেতারা একমত হন যে, সংগঠনের কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জনগণের আস্থা অর্জন করাই এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। নেতাকর্মীদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে এবং বিএনপিকে আরও শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
Leave a comment