আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-নাগরিকদের নতুন রাজনৈতিক দল। শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে ইতোমধ্যেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা থাকবেন এবং শীর্ষ পদগুলোতে কারা আসবেন, এ নিয়ে দলে বিভাজন তৈরি হয়েছে।
দলের অন্যতম দুই প্রধান অংশ—জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন—নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একমত হতে পারছে না। বিশেষ করে সদস্য সচিব পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। যদিও আহ্বায়ক হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নিচ্ছেন, তবে সদস্য সচিব পদের জন্য ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ও নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ-এর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। এ ছাড়াও এই পদে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সংগঠক সারজিস আলম-এর নাম আলোচনায় রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ১৮৮ সদস্যের মধ্যে ১১০ জন উপস্থিত ছিলেন, তবে একটি অংশ বৈঠক বয়কট করে। বয়কটকারীদের অভিযোগ, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্টেকহোল্ডারদের বাদ দিয়ে দল গঠনের চেষ্টা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ বিষয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। শনিবার রাত থেকেই আখতার হোসেন ও জুনায়েদের অনুসারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন।
নাগরিক কমিটির অভ্যন্তরে আরও অভিযোগ উঠেছে, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাঁর অনুসারীদের মধ্যে থেকেই সদস্য সচিব পদে কাউকে বসাতে চান, যাকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তবে মাহফুজের অনুসারীরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদের জন্য ছাত্রশিবির থেকে নাগরিক কমিটিতে আসা নেতারা বড় ভূমিকা রাখতে চান। তবে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের অনুসারীরা বলছেন, শিবির সংশ্লিষ্ট কেউ সদস্য সচিব হলে দলটি শুরুতেই গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি নিজেদের ৫০% করে প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে চাইছে।
গতকালকের বৈঠকে আপাতত ৭৫ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে, তবে ২৪শে ফেব্রুয়ারির আগে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ২০০ সদস্যের বেশি বা কম হতে পারে। এই সংকট নিরসনে আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি জুলাই বিপ্লবী কাউন্সিলের ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ ডাকা হয়েছে। সেখানে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনা এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবি জানানো হবে। একইসঙ্গে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার দাবি তোলা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, নতুন দলটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নাগরিকদের নিয়ে গঠিত হবে। এটি কারও একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি চূড়ান্ত করা হবে।
তবে দলের অভ্যন্তরীণ সংকট সম্পর্কে এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শুরুতেই নেতৃত্ব সংকট তৃণমূল পর্যায়ে বিভ্রান্তি ছড়াবে এবং সাধারণ মানুষ নতুন দলের ওপর আস্থা হারাতে পারে। আরেক নেতা বলেছেন, নতুন দলকে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক করতে হলে শীর্ষ পদগুলোর জন্য স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়া দরকার।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। অনেকেই আখতার হোসেনকে সমর্থন জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে সবার মতামত নেওয়া জরুরি, নাহলে এটি আগের মতো একক আধিপত্যের রাজনীতিতে পরিণত হবে।
এখন দেখার বিষয়, ২২শে ফেব্রুয়ারির সমাবেশ এবং ২৪শে ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের আগে নতুন দল অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে কি না। অন্যথায়, দলটি শুরুর আগেই বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
Leave a comment