Home শিক্ষা পদার্থবিদ জামাল নজরুল ইসলাম: বিজ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক নক্ষত্র
শিক্ষা

পদার্থবিদ জামাল নজরুল ইসলাম: বিজ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক নক্ষত্র

Share
Share

২০১৩ সালের ১৬ মার্চ বিজ্ঞান জগতের এক দুঃখজনক দিন ছিল, যখন পৃথিবীকে বিদায় জানান প্রখ্যাত পদার্থবিদ জামাল নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন সেই বিরল বিজ্ঞানী, যিনি মহাবিশ্বের গঠন ও গণিতবিদ্যায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিজ্ঞানকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ উপহার দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যু শুধু বাংলাদেশের বিজ্ঞান সমাজের জন্য নয়, সমগ্র বৈজ্ঞানিক বিশ্বের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়।
জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৮ সালে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অতি মেধাবী, এবং অল্প বয়সেই তার মধ্যে বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতি এক অদম্য আগ্রহ জন্মেছিল। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা শুরু করেন এবং সেখান থেকেই তার গবেষণার ভিত্তি গড়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকলেও দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন।
জামাল নজরুল ইসলামের গবেষণা প্রধানত দুইটি মূল ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে ছিল: মহাবিশ্বের গঠন এবং গণিতের তাত্ত্বিক মডেল। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত হন তাঁর “পদার্থবিদ্যায় গণিতের ভূমিকা” এবং “কসমোলজি” বা মহাবিশ্ববিদ্যার ওপর গবেষণার জন্য।
মহাবিশ্বের গঠন: তিনি মহাবিশ্বের গঠন ও তার বিবর্তন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন। তাঁর গবেষণা মহাবিশ্বের জন্ম, তার আকার, এবং তার ভবিষ্যত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক মডেল প্রদান করেছে। মহাবিশ্বের প্রথম মুহূর্তগুলো, যেমন বিগ ব্যাং তত্ত্বের উন্নয়ন, সেগুলোতে তার কাজ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।
গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে সংযোগ: গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। জামাল নজরুল ইসলাম এই দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়েছিলেন এবং তাঁর গবেষণায় গণিতের ব্যবহার পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সমস্যাগুলোর সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
জামাল নজরুল ইসলাম তার জীবনের বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে কাটিয়েছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ১৯৯০ সালে তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং সেখানেই তাঁর বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজের সূচনা হয়েছিল।
বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর অবিচল আগ্রহ তাঁকে শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নয়, বরং বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও অমূল্য অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি বাংলাদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের গবেষণার মান উন্নত করার জন্য কাজ করেছেন এবং বহু তরুণ বিজ্ঞানী ও গবেষক তৈরিতে সহায়তা করেছেন।
জামাল নজরুল ইসলাম ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তাঁর কাজ ও গবেষণা আজও বিজ্ঞানী, ছাত্র ও গবেষকদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। তাঁর গবেষণাগুলো এখনও মহাবিশ্বের গঠন এবং পদার্থবিজ্ঞানের নানা জটিল তত্ত্ব নিয়ে চলমান আলোচনার অংশ হয়ে রয়েছে। তাঁর মৃত্যু শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞানের জগতে একটি শূন্যতার সৃষ্টি করেছে, যা পূর্ণ হওয়ার নয়।
পদার্থবিদ জামাল নজরুল ইসলাম শুধু একটি নাম নয়; তিনি ছিলেন এক যুগান্তকারী বিজ্ঞানী, যার গবেষণা বিশ্ববিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। মহাবিশ্বের গঠন ও গণিতবিদ্যায় তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে এবং তাঁর কাজ আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। তাঁর জীবন ও কাজ একটি অমর অধ্যায়, যা বিজ্ঞান ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়ার মৃত্যু: ন্যায়বিচারের দাবি

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছরের শিশু আছিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) । বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায়...

ধর্ষণ মামলা করায় বাবাকে হত্যা, দুই জেলায় দুই লাশ উদ্ধার

বরগুনায় ধর্ষণ মামলার বাদীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ঢাকার ধামরাইয়ে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ এবং নরসিংদীর শিবপুরে নিখোঁজের ছয় দিন পর এক অটোরিকশাচালকের...

Related Articles

কুয়েটে সহিংসতায় ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হামলার অভিযোগ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে...

অস্থিরতার জেরে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ কুয়েট

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৮...

ঢাকায় প্রথম বইমেলা: ১৯৫৪ সালের এক ঐতিহাসিক আয়োজন

আজকের অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু এর শেকড়...

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া আলোচিত বইগুলো

বাংলাদেশে নানা সময়ে বিভিন্ন বই নিষিদ্ধ বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কখনো ইতিহাস...