বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা আনার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন নোবেল বিজয়ী ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস এবং স্পেসএক্স ও টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এই ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল খাতের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। প্রফেসর ইউনুস এবং মাস্ক উভয়েই মনে করেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের যুবসমাজ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এবং প্রান্তিক নারীরা ডিজিটাল দুনিয়ার অংশ হয়ে উঠতে পারবেন।
বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন রোহিঙ্গা সংকট এবং অগ্রাধিকার ইস্যুসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান এবং এসডিজি (SDG) প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। অন্যদিকে, স্পেসএক্সের পক্ষে ছিলেন কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার এবং গ্লোবাল এনগেজমেন্ট উপদেষ্টা রিচার্ড গ্রিফিথস। আলোচনায় স্টারলিংকের উচ্চগতির এবং স্বল্পমূল্যের ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল বিভাজন কমানোর উপায় এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রফেসর ইউনুস উল্লেখ করেন, স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সহজে পড়াশোনা করতে পারবে এবং টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ ঘরে বসেই চিকিৎসা সেবা পাবে। এছাড়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের ব্যবসাকে গ্লোবাল মার্কেটে সম্প্রসারণের সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণফোন যেভাবে নারীদের বিশ্বসংযোগের সুযোগ করে দিয়েছিল, স্টারলিংক হবে সেই উদ্যোগের সম্প্রসারণ। তারা শুধু গ্রামীণ নারী থাকবে না, তারা হবে বিশ্ব নারী এবং বিশ্ব উদ্যোক্তা।”
এলন মাস্ক প্রফেসর ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রোফাইন্যান্স মডেলের প্রশংসা করেন এবং বলেন, এটি বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। তিনি জানান, তিনি গ্রামীণফোন এবং গ্রামীণ ভিলেজ ফোনের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত এবং এই উদ্যোগ কীভাবে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে তা তিনি স্বীকার করেন। মাস্ক বলেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে শুধুমাত্র ইন্টারনেট পরিষেবা দেবে না, বরং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে।
বৈঠকের এক পর্যায়ে প্রফেসর ইউনুস এলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং স্টারলিংক পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন। মাস্ক ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেন, “আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।” দুই পক্ষই দ্রুত অগ্রগতির বিষয়ে একমত হন এবং এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ সমন্বয়ের দায়িত্ব দেন খলিলুর রহমান, লরেন ড্রেয়ার এবং রিচার্ড গ্রিফিথসকে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এটি হবে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ডিজিটাল পরিষেবার আওতায় এনে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য গ্লোবাল মার্কেটের দুয়ার খুলে দেবে। ইউনুস-মাস্কের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে।
Leave a comment