মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর একের পর এক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তার প্রশাসনের এক নির্দেশে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-এর কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। শুরুতে তিন মাসের জন্য সংস্থাটির কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও, পরে একে “অপরাধী সংস্থা” আখ্যা দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেন প্রশাসনের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে লাখো মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন, যা কেবল এনজিও খাত নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংস্থাটির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়, যার ফলে অন্তত ৫০ জন মার্কিন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার ঢাকা ছেড়ে গেছেন।
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও নারীর ক্ষমতায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছিল। ২০২৪ সালে সংস্থাটি বাংলাদেশে ৯৬টি প্রকল্পে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। এসব প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্থানীয় এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কর্মী এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিশু স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মৌলিক খাতেও এর বড় প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ আইএনজিও ফোরামের আহ্বায়ক হাসিন জাহান জানিয়েছেন, ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে তাদের যে সুবিধাগুলো ছিল, তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নের যে প্রচেষ্টা চলছিল, সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে। একইভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেছেন, এত বড় একটি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হওয়া দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এই বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের এখানে কিছু করার নেই। আমাদের নতুন বিকল্প তহবিল খুঁজতে হবে, যাতে এই প্রকল্পগুলো সচল রাখা যায়।”
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির দীর্ঘদিনের অবদান রয়েছে। এই সংস্থার সহায়তায় মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নতি, স্বাস্থ্য ও কৃষি গবেষণার প্রসার ঘটেছে। এছাড়া, ডিজিটালাইজেশন ও আইসিটি খাতের উন্নয়নে সংস্থাটির অবদান রয়েছে। জনপ্রিয় শিশুতোষ টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’-এও তাদের অর্থায়ন ছিল। এমনকি করোনা মহামারির সময় ফাইজার ও মডার্নার কয়েক কোটি টিকা ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হওয়া বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বড় একটি ধাক্কা হতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, যা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিকল্প কৌশল খুঁজতে হবে।
Leave a comment