স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। জনগণ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি, যার ফলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আগে ও পরে দলটি নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়।
আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, সেটিকে তিনি সাধুবাদ জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও ৪টি আইন রয়েছে, যার মাধ্যমে সরকার নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা বিচার করে দলটিকে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা সরকার নিতে পারে। তবে যেহেতু এটি একটি আইনি বিষয়, তাই সরকার প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে। আসিফ মাহমুদ জানান, অতীতে গণ-অভ্যুত্থানের পর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রক্রিয়ায় যুক্ত না থাকায় তাদের অর্জন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এবার যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করছে। তবে এখনো দলটির নাম চূড়ান্ত হয়নি এবং ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন দলে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বর্তমান সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিরা যদি রাজনৈতিক দলে যুক্ত হন, তবে তাদের সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন এবং ফ্যাসিস্ট শাসকদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করা।
সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সাংঘর্ষিক নয়, বরং সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর জনগণ একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো চায়। তবে যেহেতু সমাজের প্রতিটি স্তরে স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে, তাই সংস্কার কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
তিনি সংস্কার কমিশনের ছয়টি প্রতিবেদন বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সংস্কারগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আওয়ামী লীগের বিচারের পাশাপাশি এই সংস্কার কার্যক্রমও নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অর্থবহ করতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
Leave a comment