যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার পর থেকেই নথিপত্রহীন অভিবাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষত নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় সড়ক ও রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষের ভিড় অনেকটাই কমে গেছে। ২০ জানুয়ারির পর থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের ফুলটন এলাকা থেকে চারজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শপথ গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন–সংক্রান্ত ১০০টিরও বেশি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে জো বাইডেনের আমলের ৭৮টি আদেশ বাতিল এবং নতুন ৪৭টি নীতি প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত। এসব নীতির আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়, সীমান্ত নিরাপত্তা, এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, “সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসীরা প্রবেশ করে নানা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। প্রথমে সীমান্ত বন্ধ করা হবে এবং এরপর অপরাধীদের বের করে দেওয়া হবে।”
আইস-এর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া চার বাংলাদেশির বিষয়ে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি খাদিজা মুনতাহা রুবা জানান, তারা সাদাপোশাকধারী কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হন। একজন প্রতিবাদ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুক্ষণ পর একই এলাকায় আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অ্যাটর্নি রাজু মহাজন বলেছেন, ট্রাম্পের কঠোর নীতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যারা মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতেন, সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া সরকারি চাকরিতে বৈচিত্র্যের পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনেক অভিবাসী চাকরি হারাতে পারেন।
ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান বাতিল করা হয়েছে। এতে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা নাগরিকত্ব পাবে না। যদিও এ আদেশের বিরুদ্ধে ২৪টি রাজ্য ও শহর মামলা করেছে, যা মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অভিবাসন অ্যাটর্নি খাদিজা মুনতাহা বলেছেন, বাংলাদেশিদের উচিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং অন্যের ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ করা বন্ধ রাখা।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রেস্তোরাঁ ও সড়কে সাধারণত যেখানে বাংলাদেশিদের ভিড় থাকত, সেখানে এখন নীরবতা। নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও কঠোর হওয়ায় নথিপত্রহীন বাংলাদেশিরা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
Leave a comment