৬ মে—পৃথিবীর ইতিহাসে বহু স্মরণীয় ও প্রভাবশালী ঘটনার সাক্ষী এই দিনটি। নানা সময়, নানা ভূখণ্ডে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুধু ঐতিহাসিক মোড়বদলই নয়, সভ্যতার ধারায় চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।
শুরুটা হয়েছিল ১৭১২ সালে, নিউইয়র্কে। সেদিন নিগ্রো ক্রীতদাসরা নিজেদের শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দাসপ্রথার ভয়াবহতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এটি ছিল প্রাচীনতম ঘটনাগুলোর একটি, যা পরবর্তীকালে দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৭৯৩ সালে, ফরাসি বিপ্লবের উত্তাল পরিবেশে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় গঠিত হয় ‘কমিটি অব পাবলিক সেফটি’। এই কমিটিই পরে ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস’-এর সময় নেতৃত্ব দেয় এবং বিপ্লব-পরবর্তী ফ্রান্সের রাজনীতি ও প্রশাসনের রূপরেখা নির্ধারণ করে।
১৮৭৬ সালে উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগরী কলকাতার নাগরিক জীবনকে রূপ দিতে অনুমোদিত হয় কলকাতা কর্পোরেশন, যা আধুনিক শহর ব্যবস্থাপনার সূচনা করে।
১৮৯৬ সালের এই দিনে গ্রিসের এথেন্সে শুরু হয় আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রাচীন অলিম্পিকের পুনর্জন্ম হিসেবে ধরা হয় এই আয়োজনকে, যা আজ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর।
১৯১৭ সালে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এক অভূতপূর্ব অধ্যায়ের সূচনা করেন মহাত্মা গান্ধী। অহিংস লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের শেষ দিনে গান্ধীজি সকাল সাড়ে ছ’টায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইন ভেঙে প্রথমবার নিজ হাতে লবণ তৈরি করেন। এটি হয়ে ওঠে ব্রিটিশবিরোধী গণআন্দোলনের এক প্রতীকী মুহূর্ত।
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বিমান ভারতের আকাশে প্রবেশ করে প্রথমবারের মতো বোমাবর্ষণ করে, যা ভারতের ভূখণ্ডে সরাসরি যুদ্ধের ছোঁয়া নিয়ে আসে।
১৯৪৮ সালে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আগমন ও পরবর্তীতে প্রস্থানের পর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন তীব্রতর হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এদিন আন্দোলনের গতি নতুন মাত্রা পায়, যা পরে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে রূপ নেয়।
ইরানে ১৯৬৬ সালে এই দিনে গণআন্দোলনের চাপে তৎকালীন একনায়ক রেজা শাহ ইসলামী বিপ্লবের পথিকৃৎ ইমাম খোমেনীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। এটি ছিল ইরানি ইসলামি বিপ্লবের উত্থানের এক টার্নিং পয়েন্ট।
১৯৬৮ সালে আমেরিকায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ডের জেরে বড় বড় শহরে জাতিগত সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নেয়। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এই উত্তাল সময়টি যুক্তরাষ্ট্রের সমাজবিন্যাসকে কাঁপিয়ে দেয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসেও ৬ মে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গ্যাবন বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা ছিল নতুন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনের ধারায় একটি মাইলফলক।
১৯৮৬ সালের ৬ মে ঢাকায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। এটি এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
১৯৯২ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা স্বাধীনতা অর্জন করে। যুগোস্লাভ বিভাজনের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনে।
১৯৯৩ সালে মস্কো থেকে ১৭০০ মাইল পূর্বে রাশিয়ার একটি গোপন সামরিক পরমাণু ঘাঁটিতে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এটি তৎকালীন রাশিয়ার সামরিক নিরাপত্তা এবং পরমাণু ব্যবস্থাপনার ওপর গভীর প্রশ্ন তোলে।
এই দিনটি যেন প্রতিটি দশকে, প্রতিটি শতাব্দীতে নতুন নতুন ইতিহাস রচনা করেছে—স্বাধীনতা, সংগ্রাম, সংস্কৃতি আর সংঘাতের ভাষায়। ৬ মে কেবল একটি দিন নয়, এটি মানব সভ্যতার ধারাবাহিক উত্তরণের এক প্রতীক হয়ে রয়েছে।
Leave a comment