দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক দশক পর, অবশেষে জার্মানি ফিরে পেল পূর্ণ সার্বভৌমত্ব। ১৯৫৫ সালের ৫ মে—এই দিনটি জার্মান ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচক। পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়, পশ্চিমা মিত্র শক্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজস্ব পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের পর ১৯৪৫ সালে দেশটি চতুর্ভুজে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে চারটি দখল অঞ্চলে ভাগ হয়ে যাওয়া এই দেশটি রাজনৈতিকভাবে জর্জরিত, অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত এবং আত্মপরিচয়ের সংকটে নিমজ্জিত ছিল। ১৯৪৯ সালে পশ্চিমা ত্রয়ী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি (পশ্চিম জার্মানি), যা পূর্ব জার্মানির (সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত) প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে।
তবে ১৯৪৯ সালে রাষ্ট্র গঠিত হলেও পশ্চিম জার্মানি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ছিল না। তৎকালীন তিন পশ্চিমা মিত্রশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স—এখনো তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রেখেছিল। এই নিয়ন্ত্রণ শেষ হয় “প্যারিস চুক্তি”-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে, যা কার্যকর হয় ৫ মে ১৯৫৫-এ। এই চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা শক্তিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিম জার্মানির সার্বভৌম মর্যাদা স্বীকার করে নেয়।
এই সার্বভৌমত্ব অর্জনের পরপরই পশ্চিম জার্মানি ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়, যা দেশটির আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সামরিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে। সেই সঙ্গে জার্মানি ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এক নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
পশ্চিম জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর কনরাড অ্যাডেনাওয়ার একে জাতির “পুনর্জন্মের” দিন হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “জার্মান জাতি আজ আবার বিশ্বসভায় নিজের সম্মান নিয়ে দাঁড়াল।”
তবে এই সার্বভৌমত্ব ছিল কেবল পশ্চিম জার্মানির জন্য। পূর্ব জার্মানি তখনও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবাধীন ছিল এবং বিভক্ত জার্মানি দু’ভাগেই থেকে যায়। এই বিভাজন কাটিয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে।
তবু ৫ মে ১৯৫৫—এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকে সেই সময়ের জন্য, যখন একটি পরাজিত ও বিভক্ত জাতি ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছিল স্বাধীনতার আলোয়।
Leave a comment