সময় বহমান, আর প্রতিটি দিন ইতিহাসের একেকটি অধ্যায় হয়ে ওঠে। ১৯ ফেব্রুয়ারি তেমনই একটি দিন, যা বিশ্বজুড়ে ঘটেছে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, জন্ম নিয়েছেন বহু গুণীজন এবং ঘটেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। সময়ের পরিক্রমায় এই দিনটি রাজনীতি, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও মানব সভ্যতার বিবর্তনের এক অনন্য স্বাক্ষর রেখে গেছে।
এই দিনে বহু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ বদলে দিয়েছে। ১৮০৩ সালে সুইজারল্যান্ডে মধ্যস্থতা আইন পাস হয়, যার মাধ্যমে ক্যান্টনগুলো পুনরায় স্বাধীনতা ফিরে পায়। ১৯৫১ সালে নেপালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১০৪ বছর ধরে চলা রানা শাসনের অবসান ঘটে এবং রাজপরিবার পুনরায় ক্ষমতায় আসে।
ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসেও ১৯ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন ঢাকায় কার্জন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন হয়ে ওঠে।
বিশ্বের ইতিহাসে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সাক্ষী হয়েছে। ১৬১৮ সালে ডেনিস-অস্ট্রেলিয়া যুদ্ধের অবসান ঘটে, যা ইউরোপীয় রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো জাপানের বিমান হামলা হয়, যেখানে ২৪৩ কর্মকর্তা নিহত হন।
১৯৮৮ সালে ইরানের একটি যাত্রীবাহী বিমানে ইরাকি সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হোজ্জাতুল ইসলাম ফাজল্লাহ মাহলাদী শহীদ হন। ১৯৯৩ সালে হাইতিতে ১৫০০ যাত্রীবাহী একটি ফেরী ডুবে যায়, যেখানে মাত্র ২৮৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
বিজ্ঞানের ইতিহাসেও ১৯ ফেব্রুয়ারি এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাস, যিনি পৃথিবীকেন্দ্রিক সৌরজগতের প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিয়ে সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও, ১৮৭৮ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী থমাস আলভা এডিসন তার আবিষ্কৃত ফোনোগ্রাফের পেটেন্ট করেন। এই প্রযুক্তিই পরবর্তীতে সঙ্গীত রেকর্ডিং ও প্লেব্যাক সিস্টেমের ভিত্তি স্থাপন করে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেও ১৯ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৮৯১ সালে বিখ্যাত বাংলা পত্রিকা অমৃত বাজার পত্রিকা দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হয়, যা বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
এই দিনেই জন্ম নিয়েছেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ (১৬৩০) এবং ইংরেজ নাট্যকার রিচার্ড কাম্বারল্যান্ড (১৭৩২) । অন্যদিকে, ১৯৯৯ সালে প্রয়াত হন বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ‘দেশ’-এর প্রখ্যাত সম্পাদক সাগরময় ঘোষ।
সঙ্গীত জগতেও ১৯ ফেব্রুয়ারি এক আবেগঘন দিন। ১৯৭৮ সালে প্রয়াত হন বিখ্যাত সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী পঙ্কজ কুমার মল্লিক। এছাড়া, ২০১৭ সালে ভারতীয় বাঙালি সংগীতশিল্পী বনশ্রী সেনগুপ্ত এবং ২০১৯ সালে প্রতীক চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯ ফেব্রুয়ারি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৪ সালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, যা দেশের সংস্কৃতি ও সৃজনশীল শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট (ফোরজি) সেবা, যা দেশের ডিজিটালাইজেশনের পথে এক বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রতিটি দিনই ইতিহাসের পাতায় নতুন কিছু যোগ করে যায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি সেইসব দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা নানা পরিবর্তন, অর্জন ও সংগ্রামের সাক্ষী। এটি শুধুমাত্র অতীতের ঘটনা নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও বহন করে। যুগে যুগে এই দিনটি নতুন চমক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবে, ইতিহাসের পাতায় আরও নতুন গল্প যোগ হবে।
Leave a comment