গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ–আন্দোলনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর যে প্রচেষ্টা বিভিন্ন মহল থেকে চলছে, তাকে স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে এই জোট।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চ জানায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি ঐতিহাসিক বৈপ্লবিক মুহূর্ত, যেখানে জনগণ তাদের অধিকারের পক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৭১ সালের বিপরীতে জামায়াত ইসলামী যে অবস্থান নিয়েছিল, তা ইতোমধ্যেই ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত। এখন তারা যদি সত্যিকারের আত্মসমালোচনায় যেতে চায় এবং জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চায়, তবে সেটা যেন কোনো শর্ত বা ‘যদি–কিন্তু’ ছাড়া হতে হয়। অন্যথায় সেটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বর্তমানে দেশে বিভাজনের রাজনীতি ও আক্রমণের যে নতুন মাত্রা তৈরি হচ্ছে, তা আবারও একটি নতুন ফ্যাসিবাদী ধারা সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, অতীতের মতোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ছায়া থেকেই এই প্রবণতা জন্ম নিচ্ছে, এবং সেটি প্রতিরোধে এখনই সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে মনোযোগী হতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চ ১৯৭১ ও ২০২৪–কে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টাকে ‘ঐতিহাসিক বিকৃতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান কোনো নতুন মতাদর্শের বিপরীত পথ নয়, বরং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাবাহিকতা। জনগণের অধিকার রক্ষা, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের পথচলারই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৮ আগস্ট সাতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয় গণতন্ত্র মঞ্চ। পরবর্তীতে একটি দল বেরিয়ে গেলে বর্তমানে ছয়টি দল নিয়ে জোটটি সক্রিয় রয়েছে। এই দলগুলো হলো—আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, রফিকুল ইসলামের ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং হাসনাত কাইয়ূমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
এই বিবৃতির মাধ্যমে গণতন্ত্র মঞ্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে—আদর্শিক বিভ্রান্তি নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি সংহত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন।
Leave a comment