একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দীর্ঘ ১৩ বছর কারাভোগের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে খালাসপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম এখন দলের কেন্দ্রীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে। মুক্তির একদিন পরেই শাহবাগে তাঁকে সংবর্ধনা দেয় দলটি, আর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁর জন্য বরাদ্দ হয় আলাদা একটি কক্ষ।
যদিও এখনো তাঁকে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, তবে জামায়াতের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন। দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, কারাগারে থাকা অবস্থাতেও তিনি নিয়মিতভাবে শূরার সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।
মুক্তির পর রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ওঠে, আজহারুল ইসলাম এবার জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার কারণে তা সম্ভব নয়। আমির নির্বাচিত হন রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটে, আর বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ফলে এ বছরের শেষ দিকে দলের আমির নির্বাচন হলেও সেখানে আজহারুল ইসলামের অংশগ্রহণ নির্ভর করছে গঠনতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর।
তবে তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দলে জোর আলোচনা চলছে। বর্তমানে জামায়াতের তিনজন নায়েবে আমির রয়েছেন—মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আ ন ম শামছুল ইসলাম। গঠনতন্ত্রে নায়েবে আমিরের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, সেখানে বলা আছে “প্রয়োজনীয় সংখ্যক”।
এ টি এম আজহার ২০১১ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর বড় মগবাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন। সে সময় তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ২৭ মে তাঁকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়, পরদিনই তিনি মুক্তি পান।
দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার তিন ধাপের প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে তিনি নির্বাচিত হন। এ ধাপে মজলিসে শূরার নির্বাচিত সদস্যরা গোপন ভোটে আরও ৩০ জনকে নির্বাচিত করেন, যাঁদের অধিকাংশই কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা। আজহারুল ইসলাম ওই ৩০ জনের মধ্যে একজন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
তৃতীয় ধাপে আমির নিজ ক্ষমতাবলে মজলিসে শূরায় আরও কিছু সংখ্যক সদস্য মনোনয়ন দেন, যাঁরা বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি অথবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে বিজয়ী হননি। সব মিলিয়ে এখন মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
তবে এখনো এ টি এম আজহার শপথ নেননি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শূরার সদস্যদের শপথ নিতে হয়, যা তিনি কারাগারে থাকায় করতে পারেননি। শপথ নেওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হবেন এবং কোনো পদে যুক্ত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে।
দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, “তিনি মাত্রই মুক্তি পেয়েছেন। এখন চিকিৎসা, বিশ্রাম ও পুনর্বাসনের বিষয় রয়েছে। পরবর্তীতে আমিরে জামায়াত পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”
তবে এটুকু নিশ্চিত যে, ১৩ বছরের কারাবন্দিত্ব ও মৃত্যুদণ্ডের ছায়া থেকে খালাস পাওয়ার পর এ টি এম আজহারুল ইসলামের রাজনৈতিক অবস্থান শুধু পুনরুদ্ধারই হয়নি, বরং তিনি এখন জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ একটি পদের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
Leave a comment