সারা দেশ যখন শোকে কাতর, জাতি যখন শোকে পাথর তখন অবুঝ শিশু মেহেনাজ আফরি হুমায়রার (৯) গ্রামের বাড়িতেও কান্নার রোল। স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ আর আহাজারিতে চারদিক ভারি। পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ। বুকের ধন মেয়ের এমন মৃত্যু মা সুমি আক্তার মেনে নিতে পারছেন না ।
বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন তিনি । কখনো চোখ মেলে অবাক তাকিয়ে থাকছেন, আবার মুহূর্তেই মূর্ছা যাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে বৃদ্ধা দাদি আর্তনাদ করছেন।
এদিকে সকালে জানাজা শেষে বাবা দেলোয়ার হোসাইন রানা মেয়ের কপালে নয় বারবার চুমু খাচ্ছিলেন কফিনে আর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন । অশ্রুসিক্ত নয়নে কফিনে চুমু দিয়ে মেয়ের শেষ বিদায়ের এমন দৃশ্য যেনো দেখেনি কেউ। এমন দৃশ্য দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেননি কেউই।
গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যু হয় মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেহেনাজ আফরি হুমায়রার। নিহত হুমায়রা ওই এলাকার দেলোয়ার হোসাইনের একমাত্র মেয়ে। দেলোয়ার হোসাইন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেছেন দেলোয়ার হোসাইন ও তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার।
শিশু হুমায়রার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিমান দুর্ঘটনায় হুমায়রার মৃত্যুর খবরটি সোমবার বিকেলেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন সন্ধ্যার পর থেকেই ভিড় করতে থাকেন গ্রামের বাড়িতে।
রাত আড়াইটার দিকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় হুমায়রার লাশ। এ সময় ওই বাড়িতে কান্না ও আহাজারির শব্দে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সকলের প্রিয় ছোট্ট হুমায়রার মৃত্যু যেনো মেনে নিতে পারছেনা এলাকাবাসীও। হুমায়রার বাবা দেলোয়ার ও মা সুমি আক্তারের চোখের পানি যেনো ফুরিয়ে গেছে। পরিচিতজন বন্ধুবান্ধবদের কোনো সান্ত্বনার বাণী থামাতে পারছে না তাদের।
হুমায়রার বৃদ্ধা দাদি আহাজারি করছেন- ‘আমার বোন (নাতনি হুমায়রা) ঈদের মধ্যে বাড়িতে আইছিলো। বাড়িজুইড়্যা কতো দৌড়াদৌড়ি খেলাধুলা করলো! ওইটাই ছিল আমার সঙ্গে শেষ দেহা। এরপরে গত সপ্তাহে মাত্র একবার ফোনে কথা কইছিলাম। গত সোমবার সকালেও ফোনে কথা কইতে চাইছিলো, কিন্তু কবার পারি নাই। শেষ কথা না কইয়াই চইল্যা গেল বোনে আমার’।
হুমায়রার বাবা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক দেলোয়ার হোসাইন বলেন, হুমায়রার ছুটি হয়েছিল। তাকে বলছি- অপেক্ষা করো তোমার মা নিতে আসবে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে- আমার স্ত্রী (সুমি) শ্রেণিকক্ষের কাছে যাওয়ার আগেই ওর সামনেই বিমানটি আমার মেয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ঢুকে পড়েছে। সব ঘটনা আমার স্ত্রীর চোখের সামনেই ঘটেছে, কীভাবে সান্তনা দেবো তাকে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান তিনি, শহরের ভেতরে যেনো আর কখনো বিমানের প্রশিক্ষণ না হয়।
এদিকে হুমায়রার দাদা আবদুল বাছেদ শুধু বলছেন, ‘এবার কুরবানির ঈদে দাদু এসেছিল। দাদু সারাক্ষণ আমার সঙ্গেই থাকতো। আর কোনোদিন আসবে না আর আমাকে দাদু ডাকবে না’!
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় হুমায়রার জানাজা নামাজ হতেয়া গাবলের বাজারে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শিকদার মুহাম্মদ সবুর রেজাসহ চার শতাধিক স্থানীয় মুসুল্লি উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হুমায়রাকে।
Leave a comment