ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর ধারাবাহিকতায় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার বারোমারি সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে সহায়তাকারী একটি চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে বিজিবি।
ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চলমান সতর্কতামূলক অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে বারোমারি বিওপির একটি টহল দল দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেঞ্জামিন চিড়ান (৪৫) ও সীশল (২৮) নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, আটক বেঞ্জামিন চিড়ান মানবপাচার সহযোগী হিসেবে পরিচিত । অপর আটক ব্যক্তি সীশল তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। টহল চলাকালে সন্দেহজনক গতিবিধির ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয় এবং পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শরীফ ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে বিজিবি নজরদারি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে মানবপাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সীমান্তপথে অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়।
বিজিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেছে যে তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ পারাপারে সহায়তা করে আসছিল। এই চক্রটি স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েকজন সক্রিয় সদস্যের মাধ্যমে সীমান্তপথে চলাচল সহজ করত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে একই চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ফিলিপের স্ত্রী ডেলটা চিড়ান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং অপর এক সহযোগী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করে বিজিবি। পরবর্তী সময়ে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসব আটকের মধ্য দিয়ে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় মানবপাচার নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত অপরাধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় অপরাধী চক্রের সক্রিয়তা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে বিজিবির ধারাবাহিক অভিযান সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
লে. কর্নেল মো. মেহেদী হাসান বলেন, “সীমান্তে যেকোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মানবপাচার, চোরাচালান কিংবা অপরাধীদের সহায়তা—এ ধরনের কোনো কার্যক্রমই বরদাশত করা হবে না। সীমান্ত এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
Leave a comment